জমির অধিকার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি

“যখন মাটির উপরে আমাদের দাবি সামান্য ছিল, যখন অল্প ফসল পাইলেই আমাদের পক্ষে যথেষ্ট হইত, তখনো যে নিয়মে চাষবাস চলিত, এখনো সেই নিয়মেই চলিতেছে।”

— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন

উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ :

রবীন্দ্র রচনা সমগ্র,

প্রবন্ধ সংকলন ‘পল্লীপ্রকৃতি’, 

প্রবন্ধ ‘ভূমিলক্ষী’ :

---------------

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার বোলপুরের কাছে এক গ্রামে বেড়াতে গিয়াছিলেন। সেখানে তিনি একদিন এক চাষী-গৃহস্থের বাড়িতে বেড়াতে যান। গৃহস্থ চাষী রবীন্দ্রনাথকে দেখে  বসবার জন্য আসন পেতে দেন। সযত্নে আপ্যায়ন করেন। নানা কথার পর এক সময় ওই ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের কাছে একটা অনুরোধ করেন। বলেন, তার একটি ছেলেকে রবীন্দ্রনাথ যেন তাঁর বিদ্যালয়ের একটা চাকরি দেন। রবীন্দ্রনাথ জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার তো চাষের কাজ আছে, তবে অমন জোয়ান ছেলেকে সাত-আট টাকা মাহিনায় অন্য কাজে কেন পাঠাইতে চাও।’ উত্তরে চাষী বললেন, ‘হিসাব করিয়া দেখিয়াছি, চাষে আমাদের কুলায় না। একদিন ছিল যখন ইহাতেই আমাদের অভাব স্বচ্ছন্দে মিটিত, কিন্তু এখন সেদিন গিয়াছে।’

চাষীর এই মত পাল্টানোর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘ভূমিলক্ষী’ নামে একটি প্রবন্ধ যা ‘পল্লীপ্রকৃতি’ নামে প্রবন্ধ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রবন্ধে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন জমিতে চাষ করে কৃষকের সারা বছরের খরচ উঠছে না। সেই সব কারণগুলোর অন্যতম একটি হল, কৃষি কাজের পুরনো পদ্ধতি অনুসরণ করা। উপরের উদ্ধৃতিতে সেই কারণ- এর উল্লেখ রয়েছে। ভূমি লক্ষী প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন,

“এ প্রশ্নের উত্তর (চাষ করে ‘অভাব স্বচ্ছন্দে না মেটার’ কারণ) এই যে, যখন মাটির উপরে আমাদের দাবি সামান্য ছিল, যখন অল্প ফসল পাইলেই আমাদের পক্ষে যথেষ্ট হইত, তখনো যে নিয়মে চাষবাস চলিত এখনো সেই নিয়মেই চলিতেছে— প্রয়োজন অনেক বেশি হইয়াছে, অথচ প্রণালী সমানই আছে। জমি যখন বিস্তর পড়িয়া থাকিত তখন একই জমিতে প্রতি বৎসরে চাষ দিবার দরকার ছিল না, জমি বদল করিয়া জমির তেজ অক্ষুণ্ন রাখা সহজ ছিল। এখন কোনো জমি পড়িয়া থাকিতে পায় না। অথচ চাষের প্রণালী যেমন ছিল তেমনই আছে।”

--------xx-------