বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কে দ্যুতি মুখোপাধ্যায়ের উক্তি
বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কে দ্যুতি মুখোপাধ্যায়ের উক্তি :
![]() |
বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কে দ্যুতি মুখোপাধ্যায়ের উক্তি |
“এক পুরুষের মৃত্যুর হিমালয় প্রমাণ ভারে পালক হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ নারীর ধর্ষিত, নিগৃহীত, নিহত হয়ে চলার দৈনন্দিন বাস্তব।”
— দ্যুতি মুখোপাধ্যায়
লেখক, সাংবাদিক ও অনুবাদ কর্মী
উক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
উক্তিটির উৎস :
২০১৯ - ২০২১ - এই কালপর্বে স্বামীর হাতে যৌন হিংসার শিকার দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মহিলা : ভারতে বোধহয় সত্যিই ‘সব মরণ নয় সমান’।
— ২৫ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে লেখা দ্যুতি মুখোপাধ্যায়ের উত্তর সম্পাদকীয় শিরোনাম এটি। লেখাটি প্রকাশিত হয় পশ্চিমবঙ্গের বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র ‘এই সময়’-এর সম্পাদকীয় পাতায়।
উক্তিটির প্রসঙ্গ :
লেখক, সাংবাদিক ও অনুবাদ-কর্মী দ্যুতি মুখোপাধ্যায় তাঁর এই প্রবন্ধের শিরোনামটি লিখেছেন সদ্য প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের একটি জনপ্রিয় গান ‘সব মরণ নয় সমান’-এর শিরোনামটি ব্যবহার করে।
প্রতুল মুখোপাধ্যায় এই লাইনটি লিখেছিলেন শ্রেণী সংগ্রামে লিপ্ত মানুষের মৃত্যুর মূল্য নির্ধারণ করতে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে যে আপসহীন লড়াই কিছু মানুষ করে যান যুগ যুগ ধরে এবং শেষমেষ জীবন দান করেন, তাঁদের সেই মরণ স্বাভাবিক মরণ নয়। এই মরণ গৌরবের, এই মরণ শোষিত মানুষের প্রেরণার উৎস। তাই এই মরণ মূল্যহীন নয়। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের মতে, পাখির পালকের মত হালকা নয়।
দ্যুতি মুখোপাধ্যায় বৈবাহিক ধর্ষণ ও তার শিকার নারী সমাজের প্রতি বিচার ব্যবস্থার অবজারভেশন ও তার গলদ তুলে ধরতে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের এই শিরোনামটি উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “কেউ কি মিথ্যা মামলা করে না? নিশ্চয়ই করেন। সব আইনেই অপব্যাহারের সুযোগ থাকে, অপব্যবহারও হয় সেই সব আইনেরই। কিন্তু ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে, যেখানে থানা-পুলিশ করার সাহস করেন না বেশিরভাগ মহিলা, সেখানে সেই নগণ্য কিছু মিথ্যা মামলার জন্য একটা গোটা আইনকে রোধ করে দেওয়ার ধুয়ো তোলা হচ্ছে যা শুধু গার্হস্থ্য হিংসার শিকার নয়, বৈবাহিক ধর্ষণের শিকারদের কাছেও ন্যায়বিচার পাওয়ার একমাত্র আইন রাস্তা। এক পুরুষের মৃত্যুর হিমালয়ে প্রমাণ ভারে পালক হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ নারীর ধর্ষিত নিগৃহীত নিহত হয়ে চলার দৈনন্দিন বাস্তব।”
সম্প্রতি, বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী পুতুল সুভাষের আত্মহত্যা ও তাঁর রেখে যাওয়া অভিযোগ হল : পুতুল সভাসের স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে ৪৯৮ এ ধারায় পণের কারণে বধূ নির্যাতনের মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাকে ব্ল্যাকমেল করছিলেন। আর এ কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সহ সমাজ মাধ্যমে ঝড় বয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে ৪৯৮ এ ধারার কার্যকারিতা নিয়ে। দুটি মুখোপাধ্যায় লিখছেন, “এর মাস খানেক কেটেছে কি কাটেনি গণমাধ্যমে কারো কারো নজরে করতে থাকে আরও একটি খবর। ২০১৯ সাল থেকে জেলবন্দি এক পুরুষকে বেকসুর খালাস দিয়েছে ছত্রিশগড় হাইকোর্ট। ২০১৭ সালে এই লোকটি তার স্ত্রীর সঙ্গে বলপূর্বক অস্বাভাবিক যৌনসঙ্গম করার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন স্ত্রী কয়েক ঘন্টা হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর আগে ম্যাজিস্ট্রেট সামনে দেওয়া মৃত্যুকালীন জবানবন্দীতে জানিয়ে যান নির্যাতিতা, স্বামী ধর্ষণ করেছেন তাকে। ২০১৯ সালে ধর্ষণ প্রকৃতি বিরুদ্ধে যৌনতা এবং অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু সংগঠনের ধারা গুলিতে স্বামীকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। সেই রায়কেই সম্প্রতি আইনের বিকৃতি আখ্যা দিয়ে ওই ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছেন ছত্রিশগড় হাইকোর্টের বিচারপতি নরেন্দ্র কুমার ব্যাস। তার যুক্তি? ভারতের অকারণে কড়া, মেয়েদের প্রতি পক্ষপাত দুষ্ট, পুরুষদের ফাঁদে ফেলার চক্রান্ত, আইন মালায় বৈবাহিক ধর্ষণের কোন শাস্তি বিধান নেই।”
এই রায়ের অসারতা ও যুক্তির দুর্বলতা তুলে ধরতেই তিনি প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানের কলিটি ব্যবহার করেছেন। এবং শ্লেষ মিশিয়ে বলেছেন, “বিয়ে একবার হয়ে গেলে স্বামীর যৌনতার দাবিতে ‘না’ বলার কোনও অধিকার নেই ভারতীয় নারীর। যদি-বা তিনি বলেও ফেলেন, সেই ‘না’-এর কোন মূল্য নেই ভারতের আইনের কাছে। তাঁর প্রাণ বেরিয়ে গেলেও নয়। এ হেন মরণের ভার দেখে পাখির পালক হাসবে না তো কি করবে!”
প্রবন্ধের শেষ অংশে এই শ্লেষকে ছুড়ে দিয়েছেন আম জনতার বিবেকের দরবারে। তিনি লিখেছেন, “চলুন, এই পালক গুলিকে আমরা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিই। বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন করলে যদি সেই আইন অপব্যবহার করে কেউ, যদি সেই অপব্যবহারের ফলে কোন পুরুষ কোনদিন আত্মহত্যা করেন, সেই মৃত্যুকে ঠেকাতে আমরা লক্ষ লক্ষ ধর্ষক এবং হত্যাকারীদের বেকসুর খালাস দিয়ে চলি। আফটার অল, সব মরণ নয় সমান!”
আমি জানিনা, দ্যুতি মুখোপাধ্যায়ের এই বিশ্লেষণ আমাদের বিচার ব্যবস্থার যাঁরা ধারক ও বাহক তাঁদের চিন্তার দুর্বলতা ও তাদের হাস্যকর যুক্তির মুখে ঝামা ঘষে দিতে পারবে কিনা। জানিনা, আমজনতার পুরুষতান্ত্রিক মনস্তত্ত্বের ফলে উদ্ভূত বৈষম্যের শিকড় আলগা হবে কিনা।
-----------xx-----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন