জাতপাত উচ্ছেদ করার বিষয়ে বি আর আম্বেদকারের উক্তি
জাতপাত উচ্ছেদ করার বিষয়ে বি আর আম্বেদকারের উক্তি
“জাতপাতকে উচ্ছেদ করার জন্য সত্যিকারের উপায় হল অসবর্ণ বিবাহ। অন্য কোন কিছুই জাতপাতকে দূরীভূত করতে সাহায্য করবে না।”
— বি আর আম্বেদকর
উক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটি উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
১৯৩৬ সালে লাহোরের ‘জাত-পাত-তোড়ক মন্ডলে’র বার্ষিক সভায় সভাপতি হিসেবে ডঃ বি আর আম্বেদকরের এটি পড়ার কথা ছিল। কিন্তু, ভাষণটিতে যে মতামত ব্যক্ত হয়েছে তা অভ্যর্থনা কমিটির কাছে অসহনীয় মনে হওয়ায় সম্মেলনটিকেই বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। অপঠিত ভাষণটি পরে পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়। পুস্তক টির নাম ছিল অ্যানিহিলেশন অফ কাস্ট (জাতিবর্ণের বিলয়ন)।
এই বইয়ের বিশতম (২০) অধ্যায় থেকে এই উদ্ধৃতিটি গ্রহণ করা হয়েছে।
এখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে সমাজ থেকে জাতপাত ব্যবস্থাকে দূর করা যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন —
“উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে আরেকটি কর্মপরিকল্পনা হলো বিভিন্ন জাতের মধ্যে পঙক্তিভোজন চালু করা। আমার মতে এটাও একটি অপ্রতুল প্রতিবিধান। এমন অনেক জাত সম্প্রদায়ী আছে যারা পঙক্তিভোজন অনুমোদন করে। কিন্তু সাধারণ অভিজ্ঞতা এটাই যে, জাতপাত নিয়ে উদ্দীপনা এবং সচেতনতাকে ধ্বংস করতে পঙক্তিভোজন কখনও সফল হয়নি। আমি নিশ্চিত যে, সত্যিকারের উপায় হল অসবর্ণ বিবাহ। রক্তের সংমিশ্রণ একাই আত্মীয়তা বোধের জন্ম দিতে পারে এবং যতদিন না এই আত্মীয়তাবোধ, বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ এই স্বজনবোধ সমাজে মুখ্য বা প্রধান হয়ে উঠছে ততদিন জাতপাত সৃষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী ধারণা বা পর ভাবনা সমাজের থেকে যাবেই। ও হিন্দুদের জন্য যত না প্রয়োজন, হিন্দুদের জন্য সামাজিক জীবনে একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি হিসেবে অসবর্ণবিবাহ খুবই প্রয়োজনীয়।
অন্যান্য বিষয়ে সমাজ যেখানে ইতিপূর্বেই সুগ্রন্থিত, সেখানে বিবাহ হল জীবনের সামান্য একটি ঘটনা। কিন্তু, যেখানে সমাজকে টুকরো টুকরো করে কাটা হয় সেখানে বিবাহ একটি মিলনকারক শক্তি হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে ওঠে। জাতপাতকে উচ্ছেদ করার জন্য সত্যিকারের উপায় হল এই অসবর্ণ বিবাহ। অন্য কোনকিছুই জাতপাতকে দূরীভূত করতে সাহায্য করবে না।”
এরপর জাত পাতড়ক মন্ডলকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের জাত পাত্তরক মন্ডল এটাকেই লড়াইয়ের দিশা হিসাবে গ্রহণ করেছে। এটা একেবারেই সরাসরি এবং সম্মুখ আক্রমণ এবং আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। কারণ আপনারা সঠিকভাবেই রোগ নির্ণয় করেছেন এবং হিন্দুদের মধ্যে যা সত্যি কারের ত্রুটি তা নির্ভয়ে বলার সৎ সাহস দেখিয়েছেন। সামাজিক স্বৈরাচারের তুলনায় রাজনৈতিক স্বৈরাচার কিছুই নয়। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি যিনি গভারমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করেন তার তুলনায় একজন সংস্কারক যিনি সমাজকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি অনেক বেশি সাহসী। আপনারা যথার্থই মনে করেছেন যে, জাতপাত তার কার্যকারিতা হারাবে কেবলমাত্র তখনই যখন পঙক্তিভোজন এবং অসামর্ণবিবাহ সমাজে একটি সাধারণ চালু বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন