মোবাইল ফোন সম্পর্কে জ্যোতি বসুর মন্তব্য
মোবাইল ফোন সম্পর্কে জ্যোতি বসুর মন্তব্য :
“হাতের মুঠোয় ধরা একটি মেশিন দিল্লি-কলকাতা জুড়ে দিল। মনে হল পাশের ঘর থেকে কেউ কথা বলছে।”
— জ্যোতি বসু
উক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
Jyoti Basu's comments about Mobile Phones
Jyoti-Basus-comments-about-Mobile-Phones
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত একটি অঙ্গরাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তখন (১৯৯৫) জ্যোতি বসু। একই সঙ্গে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
কিন্তু সমগ্র কলকাতাবাসীর কাছে, সেদিনও ছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই কর্ম ব্যস্ত একটি দিন। সেই কর্মব্যস্ততার রোজনামচায় গা ভাসিয়েছিলেন শহর কলকাতার মানুষ। তাদের অধিকাংশই জানতেন, কর্মব্যস্ত সেই দিনের মধ্যেই এক ইতিহাস তৈরি হতে যাচ্ছে। শুধু কলকাতা শহর নয়, সেই ইতিহাসে চিরকালের জন্য জড়িয়ে যাচ্ছেন এক বাঙালি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নাম জ্যোতি বসু। পশ্চিম বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে, যিনি এখন ‘প্রাক্তন’ বিশেষণে বিশেষিত।
১৯৯৫ সালের ৩১ জুলাই। রাইটার্স বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে নিজের চশমার কাঁচ মুছতে মুছতেই, বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, উপস্থিত সাংবাদিকদের বললেন, “হাতের মুঠোয় ধরা একটি মেশিন দিল্লি -কলকাতা জুড়ে দিল। মনে হল পাশের ঘর থেকে কেউ কথা বলছে।” জ্যোতি বসু সেদিন হাতের মুঠোয় ধরা যে যন্ত্রের সাহায্যে কথা বলেছিলেন, সেটি মুঠোফোন। আজকের মোবাইল।
উল্লেখ্য, দেশে প্রথম কলকাতাতেই চালু হয়েছিল মোবাইল পরিষেবা। সেদিন রাইটার্স বিল্ডিং থেকে দিল্লির সঞ্চার ভবনে ফোন করেছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বাবু। সেদিন তিনি ফোনে কথা বলেছিলেন পি ভি নরসিমা রাওয়ের যোগাযোগমন্ত্রী শুকরামের সঙ্গে। সে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
আজ থেকে প্রায় আড়াই দশক আগে ১৯৯৫ সালের ৩১ জুলাই ভারতীয় একটি বেসরকারি কোম্পানি (বি কে মোদী গ্রুপ) এবং অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি (টেলস্ট্রা) যৌথ উদ্যোগে কলকাতা ও দিল্লির মধ্যে নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছিল। সেটাই ছিল ভারতের প্রথম মোবাইল নেটওয়ার্ক। ভারতে সেই মোবাইল পরিষেবা (Mobile service) চালু করেছিল ‘মোদী-টেলস্ট্রা’ নামে যৌথ উদ্যোগের একটি বেসরকারি কোম্পানি। সংস্থার দুই শরিক ছিল ভারতীয় কোম্পানি বিকে মোদী গ্রুপ এবং অস্ট্রেলিয়ার টেলস্ট্রা। আর মোবাইল সেট তৈরি করেছিল নোকিয়া কোম্পানি। নোকিয়া কোম্পানির একটি সেট ব্যবহার করে সেদিন কথা বলেছিলেন ভারতের এই দুজন মন্ত্রী।
যদিও শুরুর বছরগুলিতে মোবাইল ফোন ব্যবহার ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এক মিনিট কথা বললে দিতে হতো ১৬ টাকা ৮০ পয়সা। আর ফোন ধরে এক মিনিট কথা বললে কেটে কেটে নেওয়া হতো ৮ টাকা ৪০ পয়সা।
কিন্তু ভারতীয়দের পকেটের চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে বিদ্যুৎ গতিতে এগিয়ে গেল এই প্রযুক্তি। তাই মোবাইল ফোন আজ আর বিলাসিতা নয়, বরং মোবাইল নেটওয়ার্ক এখন একটি অত্যন্ত জরুরি পরিষেবা। মানুষের সর্বক্ষণের সঙ্গী।
-------
এই কথাগুলো বলেছিলেন Pip, চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত উপন্যাস গ্রেট এক্সপেক্টেশনস-এর প্রধান চরিত্র। যখন সে প্রথম টেলিফোন দেখেছিল, তখন তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সে এই কথাগুলো বলেছিল। তার মনে হয়েছিল যেন একটি ছোট্ট যন্ত্র দিল্লি এবং কলকাতাকে জুড়ে দিয়েছে, আর গলার আওয়াজ যেন পাশের ঘর থেকেই আসছে।
তবে, উপন্যাসের প্রেক্ষাপট কিন্তু দিল্লি বা কলকাতা নয়, বরং ইংল্যান্ডের একটি গ্রাম এবং লন্ডন শহরকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। টেলিফোন আবিষ্কারের প্রাথমিক যুগে দূরবর্তী স্থানে কথা বলাটা এতটাই অভাবনীয় ছিল যে Pip-এর কাছে সেটা পাশের ঘরে কথা বলার মতোই মনে হয়েছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন