হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক বিষয়ে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস

হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক বিষয়ে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস :

“ইহাও (ইসলাম ধর্ম) তো ঈশ্বরলাভের এক পথ, অনন্ত-লীলাময়ী মা এপথ দিয়াও তো কত লোককে তাঁহার শ্রীপাদপদ্মলাভে ধন্য করিতেছেন; কিরূপে তিনি এই পথ দিয়া তাঁহার আশ্রিতদিগকে কৃতার্থ করেন, তাহা দেখিতে হইবে; গোবিন্দের (ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত একজন ক্ষত্রিয়) নিকট দীক্ষিত হইয়া এ ভাবসাধনে নিযুক্ত হইব।”

— শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস
উক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :

Sri Sri Ramakrishna Paramahamsa on Hindu-Muslim relations

Sri-Sri-Ramakrishna-Paramahamsa-on-Hindu-Muslim-relations

শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ লীলা প্রসঙ্গ
দ্বিতীয় খন্ড, ষোড়শ অধ্যায়, ৯ - ১৪ অনুচ্ছেদ।

বেদান্তসাধনের শেষ কথা ও ইসলামধর্মসাধন

১ ঠাকুরের কঠিন ব্যাধি — ঐ কালে তাঁহার মনের অপূর্ব আচরণ

জগদম্বা দাসীর সাংঘাতিক পীড়া পূর্বোক্ত প্রকারে আরোগ্য করিয়া হউক, অথবা অদ্বৈত-ভাবভূমিতে নিরন্তর অবস্থানের জন্য ঠাকুর দীর্ঘ ছয়মাস কাল পর্যন্ত যে অমানুষী চেষ্টা করিয়াছিলেন তাহার ফলেই হউক, তাঁহার দৃঢ় শরীর ভগ্ন হইয়া এখন কয়েক মাস রোগগ্রস্ত হইয়াছিল। তাঁহার নিকটে শুনিয়াছি, ঐ সময়ে তিনি আমাশয় পীড়ায় কঠিনভাবে আক্রান্ত হইয়াছিলেন। ভাগিনেয় হৃদয় নিরন্তর তাঁহার সেবায় নিযুক্ত ছিল এবং শ্রীযুক্ত মথুর তাঁহাকে সুস্থ ও রোগমুক্ত করিবার জন্য প্রসিদ্ধ কবিরাজ গঙ্গাপ্রসাদ সেনের চিকিৎসা ও পথ্যাদির বিশেষ বন্দোবস্ত করিয়া দিয়াছিলেন। কিন্তু শরীর ঐরূপে ব্যাধিগ্রস্ত হইলেও ঠাকুরের দেহবোধবিবর্জিত মন এখন যে অপূর্ব শান্তি ও নিরবচ্ছিন্ন আনন্দে অবস্থান করিত, তাহা বলিবার নহে। বিন্দুমাত্র উত্তেজনায়১ উহা শরীর, ব্যাধি এবং সংসারের সকল বিষয় হইতে পৃথক হইয়া দূরে নির্বিকল্পভূমিতে এককালে উপনীত হইত এবং ব্রহ্ম, আত্মা বা ঈশ্বরের স্মরণমাত্রেই অন্য সকল কথা ভুলিয়া তন্ময় হইয়া কিছুকালের জন্য আপনার পৃথগস্তিত্ববোধ সম্পূর্ণরূপে হারাইয়া ফেলিত। সুতরাং ব্যাধির প্রকোপে শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা উপস্থিত হইলেও তিনি যে উহার সামান্যমাত্রই উপলব্ধি করিতেন, একথা বুঝিতে পারা যায়। তবে ঐ ব্যাধির যন্ত্রণা সময়ে সময়ে তাঁহার মনকে উচ্চভাবভূমি হইতে নামাইয়া শরীরে যে নিবিষ্ট করিত, একথাও আমরা তাঁহার শ্রীমুখে শুনিয়াছি। ঠাকুর বলিতেন, এইকালে তাঁহার নিকটে বেদান্তমার্গবিচরণশীল সাধকাগ্রণী পরমহংসসকলের আগমন হইয়াছিল এবং 'নেতি নেতি', 'অস্তি-ভাতি-প্রিয়', 'অয়মাত্মা ব্রহ্ম' প্রভৃতি বেদান্তপ্রসিদ্ধ তত্ত্বসমূহের বিচারধ্বনিতে তাঁহার বাসগৃহ নিরন্তর মুখরিত হইয়া থাকিত।২ ঐসকল উচ্চতত্ত্বের বিচারকালে তাঁহারা যখন কোন বিষয়ে সুমীমাংসায় উপনীত হইতে পারিতেন না, ঠাকুরকেই তখন মধ্যস্থ হইয়া উহার মীমাংসা করিয়া দিতে হইত। বলা বাহুল্য, ইতরসাধারণের ন্যায় ব্যাধির প্রকোপে নিরন্তর মুহ্যমান হইয়া থাকিলে কঠোর দার্শনিক বিচারে ঐরূপে প্রতিনিয়ত যোগদান করা তাঁহার পক্ষে কখনই সম্ভবপর হইত না।

২ অদ্বৈতভাবে প্রতিষ্ঠিত হইবার পরে ঠাকুরের দর্শন — ঐ দর্শনের ফলে তাঁহার উপলব্ধিসমূহ

আমরা অন্যত্র বলিয়াছি, নির্বিকল্প ভূমিতে নিরন্তর অবস্থানকালের শেষভাগে ঠাকুরের এক বিচিত্র দর্শন বা উপলব্ধি উপস্থিত হইয়াছিল। ভাবমুখে অবস্থান করিবার জন্য তিনি তৃতীয়বার আদিষ্ট হইয়াছিলেন।৩ 'দর্শন' বলিয়া ঐ বিষয়ের উল্লেখ করিলেও উহা যে তাঁহার প্রাণে প্রাণে উপলব্ধির কথা, উহা পাঠক বুঝিয়া লইবেন। কারণ পূর্ব দুইবারের ন্যায় ঠাকুর এইকালে কোন দৃষ্ট মূর্তির মুখে ঐকথা শ্রবণ করেন নাই। কিন্তু তুরীয় অদ্বৈততত্ত্বে একেবারে একীভূত হইয়া অবস্থান না করিয়া যখনই তাঁহার মন ঐ তত্ত্ব হইতে কথঞ্চিৎ পৃথক হইয়া আপনাকে সগুণ বিরাট ব্রহ্মের বা শ্রীশ্রীজগদম্বার অংশ বলিয়া প্রত্যক্ষ করিতেছিল, তখন উহা ঐ বিরাট ব্রহ্মের বিরাট মনে ঐরূপ ভাব বা ইচ্ছার বিদ্যমানতা সাক্ষাৎ উপলব্ধি করিয়াছিল।৪ ঐ উপলব্ধি হইতে তাঁহার মনে নিজ জীবনের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তা সম্যক প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিয়াছিল। কারণ শরীররক্ষা করিবার নিমিত্ত বিন্দুমাত্র বাসনা অন্তরে না থাকিলেও শ্রীশ্রীজগদম্বার বিচিত্র ইচ্ছায় বারংবার ভাবমুখে অবস্থান করিতে আদিষ্ট হইয়া ঠাকুর বুঝিয়াছিলেন, নিজ প্রয়োজন না থাকিলেও ভগবল্লীলাপ্রয়োজনের জন্য তাঁহাকে দেহরক্ষা করিতে হইবে এবং নিত্যকাল ব্রহ্মে অবস্থান করিলে শরীর থাকা সম্ভবপর নহে বলিয়াই তিনি এখন ঐরূপ করিতে আদিষ্ট হইয়াছেন। জাতিস্মরত্বসহায়ে ঠাকুর এইকালেই সম্যক বুঝিয়াছিলেন, তিনি নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত-স্বভাববান আধিকারিক অবতারপুরুষ, বর্তমান যুগের ধর্মগ্লানি দূর করিয়া লোককল্যাণসাধনের জন্যই তাঁহাকে দেহধারণ ও তপস্যাদি করিতে হইয়াছে। একথাও তাঁহার এই সময়ে হৃদয়ঙ্গম হইয়াছিল যে, শ্রীশ্রীজগন্মাতা উদ্দেশ্য-বিশেষ সাধনের জন্যই এবার তাঁহাকে বাহ্যৈশ্বর্যের আড়ম্বরপরিশূন্য ও নিরক্ষর করিয়া দরিদ্র ব্রাহ্মণকুলে আনয়ন করিয়াছেন এবং ঐ লীলারহস্য তাঁহার জীবৎকালে স্বল্পলোকে বুঝিতে সমর্থ হইলেও, যে প্রবল আধ্যাত্মিক তরঙ্গ তাঁহার শরীরমনের দ্বারা জগতে উদিত হইবে, তাহা সর্বতোভাবে অমোঘ থাকিয়া অনন্তকাল জনসাধারণের কল্যাণসাধন করিতে থাকিবে।

৩ ব্রহ্মজ্ঞানলাভের পূর্বে সাধকের জাতিস্মরত্বলাভ-সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় কথা

ঐরূপ অসাধারণ উপলব্ধিসকল ঠাকুরের কিরূপে উপস্থিত হইয়াছিল বুঝিতে হইলে শাস্ত্রের কয়েকটি কথা আমাদিগকে স্মরণ করিতে হইবে। শাস্ত্র বলেন, অদ্বৈতভাবসহায়ে জ্ঞানস্বরূপে পূর্ণরূপে অবস্থান করিবার পূর্বে সাধক জাতিস্মরত্ব লাভ করিয়া থাকেন।৫ অথবা ঐ ভাবের পরিপাকে তাঁহার স্মৃতি তখন এতদূর পরিণত অবস্থায় উপস্থিত হয় যে, ইতঃপূর্বে তিনি যেভাবে যথায় যতবার শরীর পরিগ্রহপূর্বক যাহা কিছু সুকৃত-দুষ্কৃতের অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন, সে সকল কথা তাঁহার স্মরণপথে উদিত হইয়া থাকে। ফলে সংসারের সকল বিষয়ের নশ্বরতা ও রূপরসাদি ভোগসুখের পশ্চাৎ ধাবিত হইয়া বারংবার একইভাবে জন্মপরিগ্রহের নিষ্ফলতা সম্যক প্রত্যক্ষীভূত হইয়া তাঁহার মনে তীব্র বৈরাগ্য উপস্থিত হয় এবং ঐ বৈরাগ্যসহায়ে তাঁহার প্রাণ সর্ববিধ বাসনা হইতে এককালে পৃথক হইয়া দণ্ডায়মান হয়।

৪ ব্রহ্মজ্ঞানলাভে সাধকের সর্বপ্রকার যোগবিভূতি ও সিদ্ধসঙ্কল্পত্ব-লাভ সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় কথা

উপনিষদ্ বলেন,৬ ঐরূপ পুরুষ সিদ্ধসঙ্কল্প হয়েন এবং দেব, পিতৃ প্রভৃতি যখন যে লোক প্রত্যক্ষ করিতে তাঁহার ইচ্ছা হয়, তখনই তাঁহার মন সমাধি-বলে ঐসকল লোক সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষ করিতে সমর্থ হয়। মহামুনি পতঞ্জলি তৎকৃত যোগশাস্ত্রে ঐ বিষয়ের উল্লেখ করিয়া বলিয়াছেন যে, ঐরূপ পুরুষের সর্ববিধ বিভূতি বা যোগৈশ্বর্যের স্বতঃ উদয় হইয়া থাকে। পঞ্চদশীকার সায়ন-মাধব ঐরূপ পুরুষের বাসনারাহিত্য এবং যোগৈশ্বর্যলাভ — উভয় কথার সামঞ্জস্য করিয়া বলিয়াছেন যে, ঐরূপ বিচিত্র ঐশ্বর্যসকল লাভ করিলেও অন্তরে বিন্দুমাত্র বাসনা না থাকায় তাঁহারা ঐসকল শক্তি কখনও প্রয়োগ করেন না। পুরুষ সংসারে যে অবস্থায় থাকিতে থাকিতে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে, জ্ঞানলাভের পরে তদবস্থাতে কালাতিপাত করে। কারণ চিত্ত সর্বপ্রকারে বাসনাশূন্য হওয়ায়, সমর্থ হইলেও ঐ অবস্থার পরিবর্তন করিবার আবশ্যকতা সে কিছুমাত্র অনুভব করে না। আধিকারিক পুরুষেরাই৭ কেবল সর্বতোভাবে ঈশ্বরেচ্ছাধীন থাকিয়া বহুজনহিতায় ঐ শক্তিসকলের প্রয়োগ সময়ে সময়ে করিয়া থাকেন।

৫ পূর্বোক্ত শাস্ত্রকথা অনুসারে ঠাকুরের জীবনালোচনায় তাঁহার অপূর্ব উপলব্ধিসকলের কারণ বুঝা যায়

পূর্বোক্ত শাস্ত্রীয় কথাসকল স্মরণ রাখিয়া ঠাকুরের বর্তমান জীবনের অনুশীলনে তাঁহার এইকালের বিচিত্র অনুভূতিসকল সম্যক না হইলেও অনেকাংশে বুঝিতে পারা যায়। বুঝা যায় যে তিনি ভগবৎপাদপদ্মে অন্তরের সহিত সর্বস্ব সমর্পণ করিয়া সর্বপ্রকারে বাসনাপরিশূন্য হইয়াছিলেন বলিয়াই, অত স্বল্পকালে ব্রহ্মজ্ঞানের নির্বিকল্প ভূমিতে উঠিতে এবং দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত হইতে সমর্থ হইয়াছিলেন। বুঝা যায়, জাতিস্মরত্বলাভ করিয়াই তিনি এইকালে সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন যে পূর্ব পূর্ব যুগে যিনি 'শ্রীরাম' এবং 'শ্রীকৃষ্ণ'-রূপে আবির্ভূত হইয়া লোককল্যাণসাধন করিয়াছিলেন, তিনিই বর্তমানকালে পুনরায় শরীর পরিগ্রহপূর্বক 'শ্রীরামকৃষ্ণ'-রূপে আবির্ভূত হইয়াছেন। বুঝা যায়, লোককল্যাণসাধনের জন্য পরজীবনে তাঁহাতে বিচিত্র বিভূতিসকলের প্রকাশ নিত্য দেখিতে পাইলেও কেন আমরা তাঁহাকে নিজ শরীরমনের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ঐসকল দিব্যশক্তির প্রয়োগ করিতে কখনও দেখিতে পাই না। বুঝা যায়, কেন তিনি সঙ্কল্পমাত্রেই আধ্যাত্মিক তত্ত্বসমূহ প্রত্যক্ষ করিবার শক্তি অপরের মধ্যে জাগরিত করিতে সমর্থ হইতেন এবং কেনই বা তাঁহার দিব্যপ্রভাব দিন দিন পৃথিবীর সকল দেশে অপূর্ব আধিপত্য লাভ করিতেছে।

৬ পূর্বোক্ত উপলব্ধিসকল ঠাকুরের যুগপৎ উপস্থিত না হইবার কারণ

অদ্বৈতভাবে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত হইয়া ভাবরাজ্যে অবরোহণ করিবার কালে ঠাকুর ঐরূপে নিজ জীবনের ভূতভবিষ্যৎ সম্যক উপলব্ধি করিয়াছিলেন। কিন্তু ঐ উপলব্ধিসকল তাঁহাতে যে সহসা একদিন উপস্থিত হইয়াছিল, তাহা বোধ হয় না। আমাদিগের অনুমান, ভাব-ভূমিতে অবরোহণের পরে বৎসরকালের মধ্যে তিনি ঐসকল কথা সম্যক বুঝিতে পারিয়াছিলেন। শ্রীশ্রীজগন্মাতা ঐকালে তাঁহার চক্ষুর সম্মুখ হইতে আবরণের পর আবরণ উঠাইয়া দিন দিন তাঁহাকে ঐসকল কথা স্পষ্ট বুঝাইয়া দিয়াছিলেন। পূর্বোক্ত উপলব্ধিসকল তাঁহার মনে যুগপৎ কেন উপস্থিত হয় নাই, তদ্বিষয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করিলে আমাদিগকে বলিতে হয় — অদ্বৈতভাবে অবস্থানপূর্বক গভীর ব্রহ্মানন্দসম্ভোগে তিনি এই কালে নিরন্তর ব্যাপৃত ছিলেন। সুতরাং যতদিন না তাঁহার মন পুনরায় বহির্মুখী বৃত্তি অবলম্বন করিয়াছিল, ততদিন ঐসকল বিষয় উপলব্ধি করিবার তাঁহার অবসর এবং প্রবৃত্তি হয় নাই। ঐরূপে সাধনকালের প্রারম্ভে ঠাকুর শ্রীশ্রীজগন্মাতার নিকটে যে প্রার্থনা করিয়াছিলেন, 'মা, আমি কি করিব, তাহা কিছুই জানি না, তুই স্বয়ং আমাকে যাহা শিখাইবি তাহাই শিখিব' — তাহাই এই কালে পূর্ণ হইয়াছিল।

৭ অদ্বৈতভাবলাভ করাই সকল সাধনের উদ্দেশ্য বলিয়া ঠাকুরের উপলব্ধি

অদ্বৈতভাবভূমিতে আরূঢ় হইয়া ঠাকুরের এইকালে আর একটি বিষয়েরও উপলব্ধি হইয়াছিল। তিনি হৃদয়ঙ্গম করিয়াছিলেন যে, অদ্বৈতভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়াই সর্ববিধ সাধনভজনের চরম উদ্দেশ্য। কারণ ভারতের প্রচলিত প্রধান প্রধান সকল ধর্মসম্প্রদায়ের মতাবলম্বনে সাধন করিয়া তিনি ইতঃপূর্বে প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন, উহারা প্রত্যেকেই সাধককে উক্ত ভূমির দিকে অগ্রসর করে। অদ্বৈতভাবের কথা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি সেইজন্য আমাদিগকে বারংবার বলিতেন, "উহা শেষ কথা রে, শেষ কথা; ঈশ্বর-প্রেমের চরম পরিণতিতে সর্বশেষে উহা সাধকজীবনে স্বতঃ আসিয়া উপস্থিত হয়; জানিবি সকল মতেরই উহা শেষ কথা এবং যত মত তত পথ।"

৮ পূর্বোক্ত উপলব্ধি তাঁহার পূর্বে অন্য কেহ পূর্ণভাবে করে নাই

ঐরূপে অদ্বৈতভাব উপলব্ধি করিয়া ঠাকুরের মন অসীম উদারতা লাভ করিয়াছিল। ঈশ্বরলাভকে যাহারা মানবজীবনের উদ্দেশ্য বলিয়া শিক্ষাপ্রদান করে ঐরূপ সকল সম্প্রদায়ের প্রতি উহা এখন অপূর্ব সহানুভূতিসম্পন্ন হইয়াছিল। কিন্তু ঐরূপ উদারতা ও সহানুভূতি যে তাঁহার সম্পূর্ণ নিজস্ব সম্পত্তি এবং পূর্বযুগের কোন সাধকাগ্রণী যে উহা তাঁহার ন্যায় পূর্ণভাবে লাভ করিতে সমর্থ হন নাই, একথা প্রথমে তাঁহার হৃদয়ঙ্গম হয় নাই। দক্ষিণেশ্বর কালীবাটীতে এবং প্রসিদ্ধ তীর্থসকলে নানা সম্প্রদায়ের প্রবীণ সাধকসকলের সহিত মিলিত হইয়া ক্রমে তাঁহার ঐ কথার উপলব্ধি হইয়াছিল। কিন্তু এখন হইতে তিনি ধর্মের একদেশী ভাব অপরে অবলোকন করিলেই প্রাণে বিষম আঘাত প্রাপ্ত হইয়া ঐরূপ হীনবুদ্ধি দূর করিতে সর্বতোভাবে সচেষ্ট হইতেন।

৯ অদ্বৈতবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত ঠাকুরের মনের উদারতা সম্বন্ধে দৃষ্টান্ত — তাঁহার ইসলাম ধর্মসাধন

অদ্বৈতবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হইয়া ঠাকুরের মন এখন কিরূপ উদারভাবসম্পন্ন হইয়াছিল, তাহা আমরা এই কালের একটি ঘটনায় স্পষ্ট বুঝিতে পারি। আমরা দেখিয়াছি, ঐ ভাবসাধনে সিদ্ধ হইবার পরে ঠাকুরের শরীর কয়েক মাসের জন্য রোগাক্রান্ত হইয়াছিল। সেই ব্যাধির হস্ত হইতে মুক্ত হইবার পরে উল্লিখিত ঘটনা উপস্থিত হইয়াছিল।

গোবিন্দ রায় নামক এক ব্যক্তি এই সময়ের কিছুকাল পূর্ব হইতে ধর্মান্বেষণে প্রবৃত্ত হন। হৃদয় বলিত, ইনি জাতিতে ক্ষত্রিয় ছিলেন। সম্ভবতঃ পারসী ও আরবী ভাষায় ইঁহার ব্যুৎপত্তি ছিল। ধর্মসম্বন্ধীয় নানা মতামত আলোচনা করিয়া এবং নানা সম্প্রদায়ের সহিত মিলিত হইয়া ইনি পরিশেষে ইসলামধর্মের উদার মতে আকৃষ্ট হইয়া যথারীতি দীক্ষাগ্রহণ করেন। ধর্মপিপাসু গোবিন্দ ইসলামধর্মমত গ্রহণ করিলেও উহার সামাজিক নিয়মপদ্ধতি কতদূর অনুসরণ করিতেন, বলিতে পারি না। কিন্তু দীক্ষাগ্রহণ করিয়া অবধি তিনি যে কোরানপাঠ এবং তদুক্ত প্রণালীতে সাধনভজনে মহোৎসাহে নিযুক্ত ছিলেন, একথা আমরা শ্রবণ করিয়াছি। গোবিন্দ প্রেমিক ছিলেন। বোধ হয়, ইসলামের সুফী সম্প্রদায়ের প্রচলিত শিক্ষা এবং ভাবসহায়ে ঈশ্বরের উপাসনা করিবার পদ্ধতি তাঁহার হৃদয় অধিকার করিয়াছিল। কারণ ঐ সম্প্রদায়ের দরবেশদিগের মতো তিনি এখন ভাবসাধনে অহোরাত্র নিযুক্ত থাকিতেন।

১০ সুফি গোবিন্দ রায়ের আগমন

যেরূপেই হউক, গোবিন্দ এখন দক্ষিণেশ্বর কালীবাটীতে উপস্থিত হয়েন এবং সাধনানুকূল স্থান বুঝিয়া পঞ্চবটীর শান্তিপ্রদ ছায়ায় আসন বিস্তীর্ণ করিয়া কিছুকাল কাটাইতে থাকেন। রানী রাসমণির কালীবাটীতে তখন হিন্দু সংসারত্যাগীদের ন্যায় মুসলমান ফকিরগণেরও সমাদর ছিল এবং জাতিধর্মনির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের ত্যাগী ব্যক্তিদিগের প্রতি এখানে সমভাবে আতিথ্য প্রদর্শন করা হইত। অতএব এখানে থাকিবার কালে গোবিন্দের অন্যত্র ভিক্ষাটনাদি করিতে হইত না এবং ইষ্টচিন্তায় নিযুক্ত হইয়া তিনি সানন্দে দিনযাপন করিতেন।

১১ গোবিন্দের সহিত আলাপ করিয়া ঠাকুরের সঙ্কল্প

প্রেমিক গোবিন্দকে দেখিয়া ঠাকুর তৎপ্রতি আকৃষ্ট হয়েন এবং তাঁহার সহিত আলাপে প্রবৃত্ত হইয়া তাঁহার সরল বিশ্বাস ও প্রেমে মুগ্ধ হয়েন। ঐরূপে ঠাকুরের মন এখন ইসলামধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তিনি ভাবিতে থাকেন, 'ইহাও তো ঈশ্বরলাভের এক পথ, অনন্ত-লীলাময়ী মা এপথ দিয়াও তো কত লোককে তাঁহার শ্রীপাদপদ্মলাভে ধন্য করিতেছেন; কিরূপে তিনি এই পথ দিয়া তাঁহার আশ্রিতদিগকে কৃতার্থ করেন, তাহা দেখিতে হইবে; গোবিন্দের নিকট দীক্ষিত হইয়া এ ভাবসাধনে নিযুক্ত হইব।'

১২ গোবিন্দের নিকট হইতে দীক্ষাগ্রহণ করিয়া সাধনে ঠাকুরের সিদ্ধিলাভ

যে চিন্তা, সেই কাজ। ঠাকুর গোবিন্দকে নিজ অভিপ্রায় প্রকাশ করিলেন এবং দীক্ষাগ্রহণ করিয়া যথাবিধি ইসলামধর্মসাধনে প্রবৃত্ত হইলেন। ঠাকুর বলিতেন, "ঐ সময়ে 'আল্লা'-মন্ত্র জপ করিতাম, মুসলমানদিগের ন্যায় কাছা খুলিয়া কাপড় পরিতাম; ত্রিসন্ধ্যা নমাজ পড়িতাম এবং হিন্দুভাব মন হইতে এককালে লুপ্ত হওয়ায় হিন্দু দেবদেবীকে প্রণাম দূরে থাকুক, দর্শন পর্যন্ত করিতে প্রবৃত্তি হইত না। ঐভাবে তিন দিবস অতিবাহিত হইবার পরে ঐ মতের সাধনফল সম্যক হস্তগত হইয়াছিল।" ইসলামধর্মসাধনকালে ঠাকুর প্রথমে এক দীর্ঘশ্মশ্রুবিশিষ্ট, সুগম্ভীর, জ্যোতির্ময় পুরুষপ্রবরের দিব্যদর্শন লাভ করিয়াছিলেন। পরে সগুণ বিরাট ব্রহ্মের উপলব্ধিপূর্বক তুরীয় নির্গুণ ব্রহ্মে তাঁহার মন লীন হইয়া গিয়াছিল।

১৩ মুসলমানধর্মসাধনকালে ঠাকুরের আচরণ

হৃদয় বলিত, মুসলমানধর্মসাধনের সময় ঠাকুর মুসলমানদিগের প্রিয় খাদ্যসকল, এমন কি গো-মাংস পর্যন্ত গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলেন। মথুরামোহনের সানুনয় অনুরোধই তখন তাঁহাকে ঐ কর্ম হইতে নিরস্ত করিয়াছিল। বালকস্বভাব ঠাকুরের ঐরূপ ইচ্ছা অন্ততঃ আংশিক পূর্ণ না হইলে তিনি কখনও নিরস্ত হইবেন না ভাবিয়া মথুর ঐ সময়ে এক মুসলমান পাচক আনাইয়া তাহার নির্দেশে এক ব্রাহ্মণের দ্বারা মুসলমানদিগের প্রণালীতে খাদ্যসকল রন্ধন করাইয়া ঠাকুরকে খাইতে দিয়াছিলেন। মুসলমানধর্মসাধনের সময় ঠাকুর কালীবাটীর অভ্যন্তরে একবারও পদার্পণ করেন নাই। উহার বাহিরে অবস্থিত মথুরামোহনের কুঠিতেই বাস করিয়াছিলেন।

১৪ ভারতে হিন্দু ও মুসলমান জাতি কালে ভ্রাতৃভাবে মিলিত হইবে, ঠাকুরের ইসলামমত-সাধনে ঐ বিষয় বুঝা যায়

বেদান্তসাধনে সিদ্ধ হইয়া ঠাকুরের মন অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতি কিরূপ সহানুভূতিসম্পন্ন হইয়াছিল, তাহা পূর্বোক্ত ঘটনায় বুঝিতে পারা যায় এবং একমাত্র বেদান্তবিজ্ঞানে বিশ্বাসী হইয়াই যে ভারতের হিন্দু ও মুসলমানকুল পরস্পর সহানুভূতিসম্পন্ন এবং ভ্রাতৃভাবে নিবদ্ধ হইতে পারে, একথাও হৃদয়ঙ্গম হয়। নতুবা ঠাকুর যেমন বলিতেন, "হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে যেন একটা পর্বত-ব্যবধান রহিয়াছে — পরস্পরের চিন্তাপ্রণালী, ধর্মবিশ্বাস ও কার্যকলাপ এতকাল একত্রবাসেও পরস্পরের নিকট সম্পূর্ণ দুর্বোধ্য হইয়া রহিয়াছে।" ঐ পাহাড় যে একদিন অন্তর্হিত হইবে এবং উভয়ে প্রেমে পরস্পরকে আলিঙ্গন করিবে, যুগাবতার ঠাকুরের মুসলমানধর্মসাধন কি তাহারই সূচনা করিয়া যাইল?
-------xx------

মন্তব্যসমূহ

আরও দেখুন : 👉 বরণীয় মানুষের স্মরণীয় কথা

অমর্ত্য সেন অরুন্ধতী রায় অলডাস হাক্সলি অস্কার ওয়াইল্ড অ্যাঞ্জেলা ডেভিস অ্যাডাম স্মিথ অ্যানিটা ব্রুকনার অ্যান্ড্রু জ্যাকসন অ্যারিস্টটল অ্যালবার্ট আইনস্টাইন অ্যালান ওয়াটস অ্যালান প্যাটন অ্যালান মুর আইজ্যাক গোল্ডবার্গ আওরঙ্গজেব আগাথা ক্রিস্টি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় আচার্য সত্যেন্দ্র দাস আদি শঙ্করাচার্য আবু হামিদ আল গাজ্জালি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা আব্রাহাম লিংকন আমির খসরু আর্থার শোপেনহাওয়ার আর্থার সি ক্লার্ক আলফ্রেড নোবেল আলবার্ট আইনস্টাইন আলব্যার কাম্যু আলী হোসেন আলেকজান্ডার আলেকজান্দ্রিয়া ওকাশিয়ো-কর্তেজ আল্লামা ইকবাল আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি ইবনে সিনা ইমানুয়েল কান্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইয়াসের আরাফাত ইয়েভগেনি ইয়েভতুশেঙ্কো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উইনস্টন চার্চিল উইলিয়াম শেক্সপিয়ার উডি অ্যালেন উমর খালিদ ঋত্বিক ঘটক এ পি জে আবদুল কালাম এডওয়ার্ড গিবন এডওয়ার্ড মুঙ্ক এডওয়ার্ড স্নোডেন এডগার অ্যালান পো এপিজে আবদুল কালাম এম এস স্বামীনাথন এমা গোল্ডম্যান এলিজিয়ার ইউডকভস্কি এলিফ শাফাক কনফুসিয়াস কপিল সিবল কমলা হ্যারিস কর্নেল সোফিয়া কুরেশি কাজী নজরুল ইসলাম কার্ট ভনেগাট কার্ল ইয়ুং কার্ল মার্কস কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস কৌটিল্য ক্রিস পিরিলো খালিদা পারভিন খালেদ হোসেইনি গীতা গুন্টার গ্রাস গুরজাদা আপ্পা রাও গোবিন্দ পানসারে গৌতম বুদ্ধ গ্রেটা থুনবার্গ চন্দন রায় চাই জিং চাণক্য চার্লস বুকাওস্কি চিনুয়া আচেবে জঁ পল সার্ত্র জন এফ কেনেডি জর্জ অরওয়েল জর্জ ক্যানিং জহরলাল নেহেরু জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তি জিমি কার্টার জিমি হেনড্রিক্স জুলস রেনার্ড জেমস গ্রাহাম ব্যালার্ড জোসেফ কনরাড জ্যাক-ইভেস কৌস্তু জ্যোতি বসু জ্যোতিরাও ফুলে টমাস মান ড. আহমদ শরীফ ড. মহাম্মদ ইউনুস ড. মায়া অ্যাঞ্জেলু ড. মেঘনাথ সাহা ডঃ রণজিৎ বসু ডরিস লেসিং ডেভিড অ্যাটেনবরো ডেরেক ও’ব্রায়ান ডেসমন্ড টুটু থিওডোর রুজভেল্ট থিচ নাট হান দলাই লামা দীনেশচন্দ্র সেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্যুতি মুখোপাধ্যায় নরেন্দ্র মোদী নাইজেল ফারাজে নাওমি উলফ নাওমি ক্লাইন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নেপোলিয়ন বোনাপার্ট নেলসন ম্যান্ডেলা নোম চমস্কি পল ভ্যালেরি পাবলো ক্যাসালস পিটার ইয়ারো পিথাগোরাস পূর্ণদাস বাউল পেট্রা নেমকোভা পেরিয়ার পোপ দ্বিতীয় জন পল পোপ ফ্রান্সিস প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ প্রশান্ত ভূষণ প্লুটার্ক প্লেটো ফিদেল কাস্ত্রো ফেই ফেই লি ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ফ্রেড অ্যালেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বব ডিলান বব মার্লে বান কি-মন বার্ট্রান্ড রাসেল বার্নি স্যান্ডার্স বি আর আম্বেদকর বিচারপতি বিনোদ দিবাকর বিনায়ক দামোদর সাভারকার বিমান বসুর মন্তব্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বেগম রোকেয়া বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বেনিতো মুসোলিনি বেনিত্তো মুসলিনি বেল হুকস ভি এস নইপল ভি এস নয়পল ভিক্টর হুগো ভ্লাদিমির লেনিন মকবুল ফিদা হুসেন মনমোহন সিং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাত্মা গান্ধী মহাবীর মহাভারত মাও সে তুং মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি মাওলানা ভাসানী মাদার টেরেসা মাদ্রী কাকোটি মার্ক টোয়েন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্গারেটর থ্যাচার মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র মালালা ইউসুফজাই মাহমুদ দারুউইশ মিশেল ফুকো মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ মেরি শেলি মোহন ভাগবত মোহাম্মদ আলী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ম্যালকম এক্স যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত যদুনাথ সরকার যুধিষ্ঠির রঘুরাম রাজন রঞ্জন চক্রবর্তী রঞ্জিত সেন রণজিৎ গুহ রবার্ট ফ্রস্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজীব গান্ধী রামকিংকর বেজ রামকৃষ্ণ পরমহংস রুপসা রায় রুপি কাউর রেভারেন্ড অ্যান্ডু ফুলার রোজা পার্কস লি হুইটনাম লিও তলস্তয় লুডভিগ উইটগেনস্টাইন লুপিতা নিইয়ং’ও লেনার্ড বার্নস্টাইন শংকরাচার্য শতাব্দী দাস শময়িতা চক্রবর্তী শমীক লাহিড়ী শিবরাম চক্রবর্তী শিবাজী শিমন পেরেস শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় শুভময় মিত্র শুভেন্দু অধিকারী শেখ মুজিবুর রহমান শ্রী সারদা দেবী শ্রীকৃষ্ণ শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর শ্রীশ্রীআনন্দমূর্তি সক্রেটিস সমরেশ বসু সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন সান ইয়াত সেন সালমান রুশদি সিগমুন্ড ফ্রয়েড সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় সিমন দ্য বোভোয়া সিমোন দ্য বোভোয়া সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সেবাস্তিয়ান লেলিয়ো সেরেনা উইলিয়ামস সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সৌরভ গাঙ্গুলী স্টিফেন কিং স্টিফেন হকিং স্বামী বিবেকানন্দ স্যাম অল্টম্যান স্যার উইলিয়াম জোন্স স্লাভোজ জিজেক হওয়ার্ড জিন হজরত আলী হজরত মুহাম্মদ হযরত মুহাম্মদ হাইপেশিয়া হিটলার হিপোক্রেটিস হিমাংশী নারওয়াল হেনরি ফোর্ড হেরাক্লিটাস হেরাস হেলমুট নিউটন হেলেন কেলার হোরেস হোসে সরামাগো
আরও দেখান

আরও দেখুন : 👉 গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্মরণীয় উক্তি

অবৈতনিক শিক্ষা অভিবাসী অমুসলিমদের অধিকার অরাজনৈতিক লেখক অর্থ বা টাকা অর্থনীতি অর্থনৈতিক সংস্কার অর্ধসত্য অলসতা অসততা অসত্য অসহিষ্ণুতা অসাম্য অহিংসা আইন আইনজীবী আত্ম সমীক্ষা আধুনিক বিজ্ঞান আধ্যাত্বিক জীবন আমলাতন্ত্র আমলাদের ভূমিকা আমেরিকান ড্রিম আমেরিকার ইংরেজ শাসন ইউক্রেন ইউনিয়ন ইউপিএ সরকার ইচ্ছা ইতিহাস ইনকাম ট্যাক্স ইসরাইল ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ ইসলাম ইসলাম ধর্ম ঈশ্বর ঈশ্বর-দর্শন উকিল উদারনীতি উদারপন্থী উদ্দেশ্য উদ্বাস্তু উন্নয়ন উপকথা উপনিষদ উৎপাদন উৎসব একনায়কতন্ত্র ওয়াকফ আইন ওয়াল স্ট্রিট ওষুধ ঔদ্ধত্য ঔপনিবেশিকতা কবি ও কবিতা কবিতা কমিউনিজম কর্ম কলকাতা কল্পনা কাজ কাপুরুষতা কার্য-কারণ সম্পর্ক কাশ্মীরের নিরাপত্তা কুম্ভ মেলা কুসংস্কার কূটনীতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৃষি ব্যবস্থার সমস্যা কৃষিকাজ ক্যান্সার ক্যারিশমা ক্রিয়াবাদের মূলনীতি ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি ক্ষমতা ক্ষমাশীলতা ক্ষুদ্রতা ক্ষুধা খোলা বাজার অর্থনীতি গণতন্ত্র গণনা গণহত্যা গবেষণা গীতা গো-হত্যা ঘৃণা বিদ্বেষ চাকরি চিকিৎসা চিন চিনা প্রবাদ চেতনা ছাত্র যুব জঙ্গল জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব জনবহুল শহর জমির অধিকার জলবায়ু জাতপাত জাতিবিদ্বেষ জাতীয় আয় জাতীয় সুরক্ষা এজেন্সি জাতীয়তাবাদ জীবন জৈন ধর্ম জ্ঞান জ্ঞান চর্চা জ্ঞানী জ্ঞানী ব্যক্তি ঝুঁকি ডাক্তার ডাক্তারের দায়িত্ব ডেমোক্রেটিক পার্টি তিক্ততা তীর্থ দারিদ্র দাসত্ব দায়িত্ব দুঃখ দুঃখের কারণ দুর্নীতি দূষণ দেখা দেশ দেশ ও ধর্ম দেশদ্রোহী দেশপ্রেম দ্বিজাতিতত্ত্ব ধনতন্ত্র ধনী ও ক্ষমতাধর ধরিত্রী ধর্ম ধর্ম ও উদারতা ধর্মগুরু ধর্মগ্রন্থ ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মরাষ্ট্র ধর্মান্তরকরণ ধর্মীয় নিপীড়ন ধর্ষণ ধার্মিক ধৈর্যশীলতা নজরদারি ব্যবস্থা নতুন প্রজন্ম নদী নাগরিকত্ব নামকরণ নারী নারী অধিকার নারী আন্দোলন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন নারী স্বাধীনতা নারীবাদ নারীবিদ্বেষ নারীর সাফল্য নিয়ম নির্বাচন নির্বোধ নীরবতা নেতৃত্ব নৈরাজ্য ন্যায়বিচার ন্যায় পরিবর্তন পরিবার ভেঙে যাওয়া পরিবেশ দূষণ পরিশ্রম পরিসংখ্যান পলিটিক্যল কারেক্টনেস পশ্চিম এশিয়ার সংঘাত পহেলগাও পাগল পাপ পাসওয়ার্ড পুঁজি পুঁজিপতি পুথিপাঠ পুরুষ পুরুষ মানুষ পুরোহিত পুলওয়ামা সন্ত্রাসবাদী হামলা পূজা পৃথিবী পৌরাণিক কাহিনি প্যালেস্টাইন প্রকৃতি প্রতিকৃতি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি প্রতিজ্ঞা প্রতিবাদ প্রতিভা প্রযুক্তি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রিয় হবার কারণ প্রেম ফ্যাসিজম ফ্যাসিবাদ বক্তা বজ্রপাত বড় বিষয় বন্ধু বাঁশি বাঁশির সুর বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা আন্দোলন বাংলা সাহিত্য বাংলাদেশ বাঙালি বার্ধক্য বিচার বিভাগের ক্ষমতা বিচার বিভাগের ভুল বিচারব্যবস্থা বিজয় বিজেপি সরকার বিজ্ঞান বিজ্ঞান চেতনা বিদ্যা বিদ্রোহ বিপর্যয় বিপ্লব বিবাহ বিশৃঙ্খলা বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বাস বিশ্বের মূল সমস্যা বুড়ো হাওয়া বুদ্ধি বুদ্ধিমত্তা বুদ্ধিমান মানুষ বৃহৎ শহর বেহেস্ত বৈবাহিক ধর্ষণ বোঝাপড়া বৌদ্ধধর্ম ব্যক্তি জীবন ব্যক্তি স্বার্থ ব্যবসা ব্রাহ্মণ ব্রিটিশ শিল্প ব্যবস্থা ভক্তি ও ভক্তিভাজন ভগবান ভয় ভর্তুকি ভারত ভারতবর্ষ ভারতীয় জনগণ ভারতীয় সংবিধান ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারতের অর্থনীতি ভালো থাকা ভালো নাগরিক ভালোবাসা ভাষা ভাষার বিলুপ্তি ভোট ভ্রাতৃত্ববোধ মত প্রকাশের স্বাধীনতা মন মনুষ্যত্ব মনের ব্যথা মন্দির মন্দির-মসজিদ বিতর্ক মহাকুম্ভ মহান আত্মা মহাবিশ্ব মহাভারত মহামারী মা মাতৃভাষা মানব পাচার মানবধিকার মানবসম্পদ মানুষ মানুষ হত্যা মারাঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিউজিসিয়ান মিডিয়া মিথ্যা মুক্তির উপায় মুসলমান মুসলিম বিজয় মৃত্যু মেধাবী মেয়েদের ক্ষমতা মোবাইল ফোন যুক্তি যুক্তিবাদী মানুষ যুদ্ধ রণকৌশল রাগ রাজধর্ম রাজনীতি রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক ক্ষমতা রাষ্ট্র রাষ্ট্রপতি রোগ নিরাময় লক্ষ্য লাল ফিতা লেখক শঙ্কা শান্তি শান্তি পর্ব শিক্ষক শিক্ষকতা শিক্ষা শিক্ষাল্পতা শিক্ষিত মানুষ শিখ গণহত্যা শিখ-বিরোধী দাঙ্গা শিল্পের ভাষা শিল্পের স্বাধীনতা শিশু শিশুশ্রম শুদ্ধ ও সঠিক চিন্তা শূদ্র জাতি শোষক শ্রমিক শ্রেণি শ্রমের শ্রীলঙ্কা সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যালঘু সংবিধান সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার সংস্কার সংস্কৃত ভাষা সংস্কৃতি সততা ও শিক্ষা সত্য সন্ত্রাসবাদ সন্দেহ সন্ন্যাসী সবুজ উদ্ভিদ সমাজ সমাজ বিষয়ক সমাজচ্যুত দল সমাজতন্ত্র সমৃদ্ধি সম্পদ সম্মান সম্মেলন সরকার সহিষ্ণুতা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সাধারণতন্ত্র সাফল্য সামাজিক স্বাধীনতা সাম্প্রদায়িকতা সাম্যবাদ সাম্রাজ্যবাদ সাহস সাহিত্যিক সিদ্ধান্ত সুখ সুন্দরতম জিনিস সুপ্রিম কোর্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সুশাসন সৃষ্টিকর্তা সোনা সৌন্দর্য স্কুল বোর্ড স্ট্রিট গ্যাং স্ত্রীকে লেখা পত্র স্থায়িত্ব স্বপ্ন স্বর্গ স্বাধীনতা স্বাধীনতা সম্পর্কিত স্বামী স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা স্লোগান হালকা হওয়া হিংসা হিন্দু হিন্দু ধর্ম হিন্দু মহাসভা হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক হিন্দু শাস্ত্র হিন্দু সমাজ হিন্দুত্ব হিন্দুর ভগবান হিন্দুশাস্ত্রে বিজ্ঞান
আরও দেখান

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ