বিচার বিভাগের ক্ষমতা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ
বিচার বিভাগের ক্ষমতা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ :
“গণতন্ত্রে আইনসভা, প্রশাসন এবং বিচারবিভাগ আলাদা তিনটি শাখা। সবকিছুর উপরে সংবিধান। সংবিধানই এই তিনটি শাখার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিচারবিভাগকে পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা সংবিধানই দিয়েছে।”
— সঞ্জীব খান্না ও সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ
উক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
Chief Justice's Bench on the Powers of the Judiciary
Chief-Justices-Bench-on-the-Powers-of-the-Judiciaryসঞ্জীব খান্না বর্তমানে (২০২৫ সালে) ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। সঞ্জয় কুমার হলেন সুপ্রিম কোর্টের আরেকজন শীর্ষস্থানীয় বিচারপতি। সম্প্রতি ভারতের আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের এক্তিয়ার নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলার শুনানির জন্য সঞ্জীব খান্না ও সঞ্জয় কুমারকে নিয়ে একটি দুই সদস্যের বেঞ্চ গঠন করা হয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় পাস হওয়া বিল দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু সহ একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দল শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এই অভিযোগ আনেন। এই সব অভিযোগের ভিত্তিতে আনা একটি মামলার শুনানি শেষে দেশের সুপ্রিম কোর্ট এই বিল আটকে রাখার বিরুদ্ধে মতামত প্রকাশ করে এবং বিল পাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে সর্বোচ্চ তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়। এই সময়সীমার মধ্যে, হয় বিলটিতে স্বাক্ষর করতে হবে, অথবা রাজ্য বিধানসভায় পুনর্বিবিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্ক তৈরি হয়। শুরু হয় আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার এক্তিয়ার নিয়ে বিতর্ক। ভারতের বর্তমান (২০২৫) উপরাষ্ট্রপতি জগদীশ ধনখড় অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগ ‘সুপার পার্লামেন্টে’-এর মতো আচরণ করতে শুরু করেছে। এমনকি সংশোধিত ওয়াকফ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলাতেও সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে অ্যাক্টের নানা সংস্থানের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ধনখড়। তিনি দাবি করেন, “সংসদই সর্বোচ্চ। সংবিধান পার্লামেন্টের উপর কাউকে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দেয়নি।”
এদিকে ওয়াকাপ আইনে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছিলেন, ভারতে সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের জন্য দায়ী প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না! নিশিকান্ত দুবের এই মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেই একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে।
এই জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ উপরে উল্লেখিত মন্তব্যটি করেছেন। বেঞ্চের বক্তব্য হল, “গণতন্ত্রে আইনসভা, প্রশাসন এবং বিচারবিভাগ আলাদা আলাদা তিনটি শাখা। এই তিনটি শাখাই সাংবিধানিক পরিকাঠামোর মধ্যে কাজ করে। সবকিছুর উপরে সংবিধান। সংবিধানে এই তিনটি শাখার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিচারবিভাগকে পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা সংবিধানে দিয়েছে। আইনের সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখার অধিকারও বিচারবিভাগকে দিয়েছে সংবিধান, সেখানে বিচারবিভাগীয় ব্যাখ্যার সুযোগও রয়েছে। তাই, সাংবিধানিক আদালত বিচারবিভাগীয় পুনর্বিবেচনার কাজ করলে সেটা সংবিধানের আওতায় থেকেই করা হয়।”
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, “আমাদের বিশ্বাস, জনসাধারণ গণতন্ত্রের এই তিনটি শাখার পৃথক পৃথক কাজ ও ভূমিকার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। বিচার বিভাগের কি কাজ, সেটাও জনসাধারণ জানেন। তাঁরা বোঝেন, গণতন্ত্রের অন্যান্য শাখার কাজের মূল্যায়ন এবং সেইসব শাখা সংবিধান মেনে কাজ করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার অধিকার বিচার বিভাগের রয়েছে।”
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব আন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ-এর মতে, কোন নাগরিক যখন কোন ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় রিভিউ-এর আরজি নিয়ে আদালতের দারস্ত হন, তাঁরা সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার সুরক্ষিত করার আশা নিয়েই কোর্টে যান। সেখানে সাংবিধানিক কর্তব্য পালন করাই বিচার বিভাগের ধর্ম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন