রাজনীতি সম্পর্কে শুভময় মিত্রের মন্তব্য
রাজনীতি সম্পর্কে শুভময় মিত্রের মন্তব্য :
“রাজনীতিতে যারা মাটির কাছে থেকে কাজ করবে, সে কাজে দুর্নীতি মিলেমিশে থাকলেও তারা ভোট পাবে বেশি।”
— শুভময় মৈত্র
উক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
Shubhmoy Mitra's comments on politics
Shubhmoy-Mitras-comments-on-politics
শুভময় মৈত্র কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। তিনি তাঁর উত্তর সম্পাদকীয় প্রবন্ধ বিভাগে “অধুনা সমাজমাধ্যম বা ভক্ত সেকুমাকু দ্বন্দ্ব সমাস” নামক নিবন্ধে এই মন্তব্য করেছেন।
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে, ‘এই সময়’ দৈনিক সংবাদপত্র, যা প্রকাশিত হয় ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বৃহস্পতিবার, ২২ শে মে ২০২৫ তারিখে।
রাজনীতিতে সমাজমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছেন। তিনি লিখেছেন, “মোটের উপর চাকরি না থাকা, সামাজিক জীবনে বিভিন্ন অসম্পূর্ণতা, আধুনিক সভ্যতার নানা দ্বন্দ্ব, সব কিছু মিলিয়ে মানুষের ক্ষোভ উগরে দেওয়ার জায়গা এই সমাজ মাধ্যম।” সেই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, এই ক্ষোভ যদি শাসকের পক্ষে যায় এবং ক্ষোভ প্রকাশকারী যদি এক্ষেত্রে অপরাধ করে বসেও, তবুও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার বিচার সম্ভব হয় না।
শুভময় মৈত্র তাঁর নিবন্ধে সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভূমিকার মূল্যায়ন করেছেন। এই পর্বে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “সেনাবাহিনীর সাংবাদিক সম্মেলনগুলি এতটাই যৌক্তিক হয়েছে যে, এই বিষয়টিতে তর্কের কোন জায়গায় নেই।” বিশেষ করে কর্নেল সোফিয়া কুরেশির সাম্প্রতিক সাংবাদিক সম্মেলন বক্তব্যের একটি অংশ উদ্ধৃত করে তিনি এই মত প্রকাশ করেছেন। সোফিয়া কুরেশি তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের মধ্যে উল্লেখ করেন, যা প্রাবন্ধিক শুভময় মৈত্র তাঁর নিবন্ধে উদ্ধৃত করেছেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং এর সেনাবাহিনী ভারতের সাংবিধানিক মূল্যবোধের একটি অনবদ্য প্রতিফলন।”
শুভময় মৈত্রের বিশ্লেষণ হল, যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির আইটি সেল, তিনি যাদের ‘ভক্ত’ নামে অভিহিত করেছেন, তাদের একটা অংশ দেশজুড়ে যেভাবে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে, ‘তার প্রভাব দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পড়লে মুশকিল’ হবে। এবং এটা বুঝেই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি তাঁর এই মন্তব্যটি করেছেন।
ফলে, সরকার বা বিরোধী পক্ষের সমর্থকদের জন্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিকে রাজনীতিতে টেনে এনে এবং তার সুযোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা আদায় করা সম্ভব হয়নি। তাঁর (শুভময় মৈত্র) নিজস্ব পর্যবেক্ষণ হল, সমাজমাধ্যমের তর্ক ধারাবাহিক হলেও তার নিরিখের সমাজ বা রাজনীতির কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনাই নেই। তাহলে প্রশ্ন হল, কীভাবে রাজনীতিতে জয় এবং পরাজয় নির্ধারিত হয়? এই প্রশ্নেরই উত্তর দিতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, “রাজনীতিতে যারা মাটির কাছে থেকে কাজ করবে, সে কাজে দুর্নীতি মিলেমিশে থাকলেও তারা ভোট পাবে বেশি।”
তিনি প্রবন্ধটি শেষ করেছেন এভাবে, “দেশের সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের উচ্চপদে যারা কাজ করছেন, তারা কেউ ২০১৪ সালের পরে শাসক বিজেপির আশীর্বাদ ধন্য হয়ে কর্মজীবন শুরু করেননি। তারা কেউ কংগ্রেস বিজেপি রাজনীতির অংশ নন। তারা জানেন যে, ধর্মনিরপেক্ষতার যে এক সুতো, সেটা ছিঁড়ে গেলে এদেশের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যটাই গুলিয়ে যাবে। সেটা বজায় রাখার জন্য খুব বেশি করে বোঝানোর দরকার যে, রাজনৈতিক দল ধর্মের সুড়সুড়ি দিতে পারে, কিন্তু দেশটা কোন বিশেষ ধর্মাবলম্বী ভক্তের নয়। সম্ভবত সেই ভাবনা প্রাধান্য পেয়েছে এই পরিস্থিতিতে। দেশের সরকারের এই ধর্মনিরপেক্ষ পদক্ষেপ যদি ভক্তদের হতাশ করে, তা অবশ্যই দেশের পক্ষে মঙ্গল। কারণ, সংবিধান অতিক্রম করার চেষ্টায় থাকা হিন্দু উগ্রবাদী ভক্তরা সকলেই দেশপ্রেমিক নয় এবং তাদের দাগিয়ে দেওয়া ‘দেশদ্রোহী’রা এই ভারতকে নিজের দেশ বলেই মনে করে। আর সমাজমাধ্যমে সেকু-মাকুরা... যত ভক্তদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে তত পথে-ঘাটে তাদের রাজনীতি করার লোকের অভাব প্রকটতর হবে। অন্তর্জালে বায়বীয় প্রচার তাদের আত্মশ্লাঘার কারণ হতে পারে, কিন্তু সত্যি কারের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার ক্ষেত্রে তা আদৌ কাজের নয়। বরং ভক্তদের উগ্র হিন্দু মৌলবাদী বক্তব্য যত বেশি করে গোটা দেশ প্রত্যক্ষ করবে, তত মানুষ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করবে সংবিধানের যৌক্তিকতা।”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন