শাস্তি সম্পর্কে ভলতেয়ারের উক্তি
শাস্তি সম্পর্কে ভলতেয়ারের উক্তি :
“একজন নিরীহ মানুষকে শাস্তি দেওয়ার থেকে একজন অপরাধীকে বাঁচানোর ঝুঁকি নেওয়া ভালো।”
— ভলতেয়ার
উক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
Voltaire's quote about Punishment
Voltaires-quote-about-Punishment
“the great principle that it is better to run the risk of sparing the guilty than to condemn the innocent.”
“এটি একটি মহান নীতি যে, নির্দোষকে দোষী সাব্যস্ত করার চেয়ে দোষীকে বাঁচানোর ঝুঁকি নেওয়া ভালো।”
এই উক্তিটি, প্রায়শই ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের নামে প্রচলিত। উল্লেখ্য, প্রায় একই সময়ে, প্রায় অনুরূপ একটি উক্তি প্রচলিত আছে ব্ল্যাকস্টোনের নামে।
ভোলতেয়ারের দৃষ্টিভঙ্গি:
ভলতেয়ার তাঁর ‘জাদিগ’ (Zadig) গ্রন্থে, যেটা প্রকাশিত হয়েছিল ১৭৪৮ সালে, এই ধারণাটি প্রকাশ করেছিলেন। এই উক্তিটির মাধ্যমে তিনি এই ইঙ্গিত করেন যে, একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার চেয়ে একজন দোষী ব্যক্তিকে বাঁচানোর ঝুঁকি নেওয়াই শ্রেয়।
ব্ল্যাকস্টোনের দৃষ্টিভঙ্গি :
বিশিষ্ট ইংরেজ আইনবিদ স্যার উইলিয়াম ব্ল্যাকস্টোনও একই নীতিকে সমর্থন করেছিলেন। ১৭৬৯ সালে তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, একজন নিরপরাধ ব্যক্তির কষ্টভোগের চেয়ে দশজন দোষীর পালানো ভালো। তাঁর কথায়, “আইন অনুসারে, একজন নির্দোষ ব্যক্তির শাস্তি (নিরীহ ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা) অপেক্ষা ১০ জন দোষী ব্যক্তির পালিয়ে যাওয়া ভালো।”
আইনি প্রভাব:
এই নীতি বিশ্বব্যাপী আইনি ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, বিশেষ করে প্রমাণের ধারণার ক্ষেত্রে। যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের বাইরে অপরাধ প্রমাণের দায়িত্ব প্রসিকিউশনের, এবং নিরপরাধ জীবন ধ্বংস করতে পারে এমন ভুল সিদ্ধান্ত হওয়া এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে ১৮৯৫ সালের মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলার কথা উল্লেখ করা যায়, যেখানে বলা হয়েছিল, “নিরপরাধ ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার চেয়ে একজন দোষী ব্যক্তির অপরাধকে শাস্তি ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া ভালো।”
উল্লেখ্য, এই মতবাদটি আসলে রোমান আইনের সময় থেকে শুরু হয়েছিল।
এই মামলায় অন্যান্য ব্যাখ্যা উপস্থাপন, আলোচনা এবং বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। জেফ্রি রেইম্যান এবং আর্নেস্ট ভ্যান ডেন হ্যাগের একটি ব্যাখ্যাও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যেখানে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে নিরপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করার নৈতিক দায়িত্ব যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রাধান্য পেয়েছে।
বস্তুত এটি বলা সঠিক, ১ জন নির্দোষ ব্যক্তির দোষী সাব্যস্ত হওয়ার চেয়ে ১০ জন দোষী ব্যক্তির মুক্তি পাওয়া ভালো। কিন্তু, ৪২ এর চেয়ে ১০ সংখ্যাটির সাথে অনেক নৈতিক তাৎপর্য জড়িত, এবং কেন এটি ভালো, বা কম খারাপ তা ব্যাখ্যা করা এত সহজ নয়।
নৈতিক যুক্তি:
এই উক্তিটি এই নীতিগত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি যে, নিরপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করা সর্বপ্রথম, এমনকি যদি এর অর্থ কিছু দোষী ব্যক্তিকে বিচার থেকে বাঁচতে দেওয়া হয়।
এই উক্তিটি পরামর্শ দেয় যে একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার চেয়ে একজন দোষী ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেওয়া ভালো। এই ধারণাটি নিরপরাধ ব্যক্তিদের সুরক্ষা এবং আইনি ব্যবস্থার মূল নীতি অনুমিত নির্দোষতাকে সমর্থন করার গুরুত্বের উপর জোর দেয়।
১৮২৪ সালে, টমাস ফিল্ডিং নীতিটিকে একটি ইতালীয় প্রবাদ এবং ইংরেজি আইনের একটি নীতি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। জন স্টুয়ার্ট মিল ১৮৬৮ সালে সংসদে এক ভাষণে এটিকে সমর্থন করেছিলেন। এই নীতির সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা আমাদের নিজস্ব সময়কালেও অব্যাহত রয়েছে, তবুও নীতিটিকে রক্ষা করার জন্য পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা খুঁজে পাওয়া কঠিন (এবং এখনও পর্যন্ত আমাদের জন্য অসম্ভব)। এটিকে প্রতিরক্ষার প্রয়োজন ছাড়াই একটি সত্যবাদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে থাকা নীতিটি মোটেও স্পষ্ট নয়; এবং যেহেতু এটি আমাদের অনেক ফৌজদারি বিচার নীতির ভিত্তি করে, তাই আমাদের নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এটি ন্যায্য। তবে, প্রথমে, আমাদের নীতিটির অর্থ কী তা স্পষ্ট করতে হবে।
------------xx-----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন