যৌবন সম্পর্কে ফ্রাঞ্জ কাফকার উক্তি
যৌবন সম্পর্কে ফ্রাঞ্জ কাফকার উক্তি :
“যৌবন আনন্দিত, কারণ তার সৌন্দর্য দেখার সামর্থ্য আছে। এই ক্ষমতা বজায় থাকে যার, সে বুড়িয়ে যায় না।”
—ফ্রাঞ্জ কাফকাউক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
Franz Kafka's quotes about youth
Franz-Kafkas-quotes-about-youth
📜 উক্তির উৎস
এই উক্তিটি ফ্রাঞ্জ কাফকার ‘ডায়েরি’ (Tagebücher) থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি ১৯১০ সালের প্রকাশিত ডায়ারির একটি অংশ।
🔍 প্রসঙ্গ
কাফকা যৌবনকালে তাঁর ডায়েরিতে নিজের অন্তর্দর্শন, সাহিত্যিক চিন্তাভাবনা ও দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করতেন। এই মন্তব্যটি তিনি লিখেছিলেন ব্যক্তিগত এক পর্যবেক্ষণ হিসেবে, সম্ভবত তাঁর নিজের যৌবন-অনুভূতি, সৃজনশীলতা এবং পৃথিবীকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা নিয়ে গভীর চিন্তা থেকে।
💫 কেন বলেছেন
কাফকা এই উক্তিটি মধ্য দিয়ে যৌবনের যে সৌন্দর্য উপলব্ধির অপরিসীম ক্ষমতা রয়েছে, তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। এই সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে, আনন্দিত করে। আর আনন্দ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, সৃষ্টিশীল করে তোলে। অর্থাৎ সৃষ্টির মধ্য দিয়েই মানুষ প্রকৃত অর্থে বাঁচে। তাঁর মতে, যৌবন কেবল বয়সের বিষয় নয়, বরং এটি একটি মননশীল ও আত্মিক অবস্থা, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী ও পরিণত হয়ে ওঠে। এই শক্তি তাকে অনেক বেশি প্রকৃত সত্য উপলব্ধিতে সাহায্য করে। এই সত্যের আরেক নাম হল সৌন্দর্য। কারণ, সত্য উপলব্ধি মানুষকে নতুন আলোয় আলোকিত করে, নতুন বৌদ্ধিক চেহারার অধিকারী করে তোলে, যা অন্য মানুষকে মুগ্ধ করে, তাদের পথ দেখায়। তাই যে মানুষ জীবনের এই সৌন্দর্য দেখার ও অনুভব করার ক্ষমতা ধরে রাখে, সে প্রকৃতপক্ষে কখনো বৃদ্ধ হয় না, শেষ হয় না। এটি তাঁর সাহিত্যে সাধারণ বিষয়—অস্তিত্বগত সংবেদনশীলতা এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা—এর সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। কাফকা নিজেও লিখেছেন যে তিনি লিখতে পারার মাধ্যমে বেঁচে থাকার এবং জগতকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন।
👨👦 হারমান কাফকা: পুত্রের চোখে এক কর্তৃত্বপরায়ণ ব্যক্তিত্ব
ফ্রাঞ্জ কাফকার লেখা ও ব্যক্তিগত নথি থেকে তার বাবা হারমান কাফকার একটি স্পষ্ট ছবি ফুটে ওঠে।
প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে উঠে আসা:
হারমান কাফকার জন্ম ১৮৫২ সালে। এক দরিদ্র ইহুদি পরিবারে। মাত্র চোদ্দো বছর বয়সেই তিনি জীবিকার সন্ধানে বাড়ি ছাড়েন। এবং পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন । কঠোর পরিশ্রম করে তিনি প্রাগে একটি বেশ সফল ‘হ্যাবারড্যাশারি’ (পুরুষ ও নারীদের আনুষাঙ্গিক সামগ্রীর দোকান) প্রতিষ্ঠা করেন ।
কর্তৃত্বপরায়ণ ও অভিব্যক্তিহীন স্বভাব:
ফ্রাঞ্জ কাফকা তাঁর বাবাকে একজন ‘বিশাল, স্বার্থকেন্দ্রিক, অহংকারী ব্যবসায়ী’ বলে বর্ণনা করেছেন । হারমান তাঁর সন্তানের প্রতি স্নেহ ও উৎসাহ দেখাতে পারতেন না, বরং তাকে প্রায়ই হতাশ ও অপরাধবোধে ভুগিয়েছেন । ফ্রাঞ্জ তার ‘বাবাকে লেখা চিঠি’-তে এ সম্পর্কিত মর্মন্তুদ বর্ণনা দিয়েছেন ।
পুত্রের সাহিত্যচর্চায় অনীহা:
ব্যবহারিক বুদ্ধিসম্পন্ন হারমান কাফকা তাঁর পুত্রের সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগকে ‘Brotberuf’ বা ‘রুটিরুজির জন্য কাজ’ বলে অবজ্ঞা করতেন এবং চাইতেন ফ্রাঞ্জ পরিবারের ব্যবসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তিনি প্রায়ই ফ্রাঞ্জের লেখালেখির আগ্রহকে নিরুৎসাহিত করতেন ।
📝 ফ্রাঞ্জ কাফকার জীবন ও সাহিত্যে পিতার ছায়া
হারমান কাফকার প্রভাব ফ্রাঞ্জ কাফকার ব্যক্তিগত জীবন এবং সাহিত্যকর্ম উভয় ক্ষেত্রেই সুস্পষ্ট:ব্যক্তিগত জীবনের সংঘাত:
ফ্রাঞ্জ কাফকা সারাজীবনই তাঁর বাবার আধিপত্য ও সমালোচনার ভয়ে আতঙ্কিত ছিলেন । তিনি মনে করতেন তাঁর বাবা তাঁর ‘ইচ্ছাশক্তি’কে ভেঙে দিয়েছেন, যা তাঁর জন্য স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা এবং নিজের পরিবার গড়ে তোলাকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছিল।
· সাহিত্যকর্মে পিতৃ-ছবি:
কাফকা নিজেই স্বীকার করেছিলেন, “আমার সমস্ত লেখাই তোমাকে নিয়ে; আমি সেখানে কেবল সেসব জিনিসের বিলাপ করেছি যা আমি তোমার বক্ষে হেলান দিয়ে করতে পারিনি।” এই দ্বন্দ্ব ‘দ্য জাজমেন্টস (ডাস উরটাইল) এবং ‘দ্য মেটামরফোসিস’ (ডাই ফ্যারভান্ডলুং) এর মতো গল্পে শক্তিশালী পিতৃ-চরিত্রের মাধ্যমে শিল্পরূপ পেয়েছে । তাঁর উপন্যাসসমূহেও (‘দ্য ট্রায়াল’ ও ‘দ্য ক্যাসল’) একটি অপ্রতিরোধ্য ও দুর্বোধ্য ক্ষমতার সাথে ব্যক্তির নিরন্তর সংঘাতের চিত্র ফুটে উঠেছে, যা মূলত তাঁর পিতার সাথে তাঁর নিজের লড়াইয়েরই প্রতীক ।
🧑💼 ফ্রাঞ্জ কাফকার ব্যক্তিগত জীবনপথ
তাঁর বাবার প্রভাব থেকে সৃষ্ট আতঙ্ক ও হতাশা সত্ত্বেও, ফ্রাঞ্জ কাফকা একজন সুক্ষ্ম মেধাসম্পন্ন ও সংবেদনশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠেন।শিক্ষা ও পেশা:
কাফকা প্রাগের জার্মান চার্লস-ফার্ডিনান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯০৬ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বোহেমিয়া রাজ্যের ‘Worker's Accident Insurance Institute’-তে একজন insurance officer হিসেবে কাজ করেন। দৈনিক ছয় ঘন্টার এই চাকরিটি তাঁকে লেখালেখির জন্য কিছুটা সময় দিয়েছিল ।
সাহিত্যের প্রতি নিষ্ঠা:
চাকরিকে তিনি ‘রুটিরুজির জন্য কাজ’ হিসেবে দেখলেও , লেখালেখিই ছিল তাঁর প্রকৃত পেশা। তিনি ছিলেন একজন নিবিড় পাঠক এবং ম্যাক্স ব্রডের মতো ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতেন ।
ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও মৃত্যু:
কাফকা একাধিকবার প্রেমে পড়লেও (ফেলিসে বাউয়ার, মিলেনা জেসেনস্কা) কখনোই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি । ১৯১৭ সালে তাঁর যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়ে এবং এই রোগেই ১৯২৪ সালে মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
------------xx-----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন