হিন্দু সম্পর্কে ভারতেন্দু হরিশচন্দ্রের উক্তি
হিন্দু সম্পর্কে ভারতেন্দু হরিশচন্দ্রের উক্তি :
“যিনি হিন্দুস্তানে বাস করেন, তিনি যে বর্ণের, যে জাতির হন না কেন, তিনি হিন্দু।”
— ভারতেন্দু হরিশচন্দ্রউক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
Bharatendu Harishchandra's quotes about Hindus
Bharatendu-Harishchandras-quotes-about-Hindus
বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতিসত্তা নিয়ে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়ার আইটি সেল এর প্রধান যে ব্যঙ্গক্তি করেছেন তা নিয়ে পশ্চিমবাংলার রাজ্য রাজনীতি আন্দোলিত হয়ে উঠেছে। তিনি লিখেছেন, “বাঙালি বলতে জাতি পরিচয় বোঝায়, ভাষাগত ঐক্য নয়। বস্তুত বাংলা বলে এমন কোন ভাষায় নেই, যা সবকটা বৈচিত্র্য কে ধরতে পারে। অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে বাংলাদেশী ভাষার উল্লেখ করে দিল্লি পুলিশ ঠিকই করেছে। ভারতে বলা বাংলার থেকে স্বতন্ত্র উপভাষা, বাক্য গঠন, গুলি বোঝাতেই এই পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি ভাষা শুধু ধনীগতভাবে পৃথক নয়, তাতে সিলেটের মত উপভাষা আছে, যা ভারতের বাঙালিরা মোটেই বোঝেন না।”
হিন্দু শব্দের অর্থ নিয়ে জনমানসে প্রচুর বিভ্রান্তি রয়েছে। যারা হিন্দুত্ববাদী দার্শনে বিশ্বাসী তারা এই শব্দকে সনাতন ধর্ম অর্থে ব্যবহার করেন। মূলত বিজেপি এবং আরএসএস সহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এভাবেই শব্দটির ব্যবহার করে থাকেন।
কিন্তু প্রকৃত অর্থে, হিন্দু শব্দটির মধ্যে কোন ধর্মীয় সত্তা নেই। আছে জাতিগত সত্তা। সাহিত্যিক ভারতেন্দু হরিশচন্দ্র একজন কবি লেখক ও নাট্যকার। ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রসারে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, এলাক এলাকার কোন প্রশ্ন নেই, বাঙালি মারাঠি মাদ্রাজি সবাই হিন্দু। এমনকি ধর্মেরও প্রশ্ন নেই। বৈদিক জৈন ব্রাহ্ম মুসলমান তারাও সবাই হিন্দু। সবার হাতে হাত ধরে চলার ঘোষণা করেন তিনি। তার আদর্শে শুধু আঞ্চলিক সীমা ভাঙছে না, পৌত্তলিকতাবিরোধী ব্রহ্মরাও এখানে সচ্ছন্দে ঢুকে পড়ছে। সহবাসেই ভিন্নধর্মী মুসলমানেরাও বাদ পড়ছে না। সবই হিন্দুর ছাত্র ছায় লালিত ও পালিত। মূলত এটা বোঝাতেই ভারতেন্দু হরিশচন্দ্র বলেছিলেন, “যো হিন্দুস্থান মেঁ রহে, চাহে কিসি রঙ্গ কিসি জাতি কা কিঁউ না হো, উয়ো হিন্দু।” অর্থাৎ “যিনি হিন্দুস্তানে বাস করেন, তিনি যে বর্ণের, যে জাতির হন না কেন, তিনি হিন্দু।”
তবে লক্ষ্য করার বিষয় হল, ভারতেন্দু হরিশচন্দ্র হিন্দুর বর্ণ নেই, জাতি নেই, ধর্ম নেই —একথা মানলেও ভাষার প্রশ্নে তিনি ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। তিনি মনে করতেন, হিন্দি হল হিন্দুর ভাষা। কারণ, তার যুক্তি হলো, ভাষাকে ভৌগলিক প্রশ্ন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না। মধ্যযুগে হিন্দভি বা হিন্দুই ভাষার সূত্রেই তো হিন্দুস্তান নামটি এসেছে। অতএব হিন্দু বা ভারতীয় জাতীয় পরিচিতির জরুরিতম উপকরণ হল হিন্দি ভাষা। সুতরাং তাঁর মতে, ভারতীয় জাতিসত্তার মূল ভিত্তি হল হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুস্তান।
ভারতেন্দু হরিশচন্দ্রের সমসাময়িক লেখক প্রতাপ নারায়ণ মিশ্রর মধ্যেও এই ভাবনার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। তিনি তাঁর সম্পাদিত ‘ব্রাহ্মণ’ পত্রিকার শেষ সংখ্যায় লিখেছেন, “তারাই বুদ্ধিমান যারা নিজের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস আর পোশাককে খারিজ করে দেন না। তা-ই তো সমস্ত সৌভাগ্যের পরিচয় : হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান।”
অমিত মালব্য এবং তার রাজনৈতিক সহযাত্রীরা ভারতেন্দু হরিশচন্দ্র এবং প্রতাপ নারায়ণ মিশ্রদের সার্থক উত্তরসূরী। সুতরাং তাদের কাছে বাংলা ভাষা মর্যাদা পাবে না —এটাই স্বাভাবিক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন