হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক বিষযয়ে ক্ষিতিমোহন সেনের উক্তি
হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক বিষযয়ে ক্ষিতিমোহন সেনের উক্তি :
“ভারতে যখন হিন্দু ও মুসলমান সাধনার মিলন ঘটিয়াছে তখনই নানা ঐশ্বর্য সৃষ্টি হইয়াছে। যখনই এই দুইয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ও বিরোধ ঘটিয়াছে তখন কেবলই প্রলয় ও সর্বনাশ আসিয়াছে।”
— ক্ষিতিমোহন সেনউক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
Kshitimohan Sen's statement on Hindu-Muslim relations
Kshitimohan-Sens-statement-on-Hindu-Muslim-relations
ভারতে হিন্দু মুসলমানের যুক্ত সাধনা,
অধ্যাপক ক্ষিতিমোহন সেন
স্থাপত্য শিল্প, পৃষ্ঠা নম্বর ৪৪
প্রকাশক : ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড
দ্বিতীয় মুদ্রণ, ২০২৩।
প্রথম প্রকাশ : ১৯৪৯ সাল।
ক্ষিতিমোহন সেন একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ এবং লেখক। ১৮৮০ সালের দোসরা ডিসেম্বর কাশিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাদের আদি নিবাস ছিল ঢাকার বিক্রমপুরে। তার পিতা ভুবন মোহন সেন ছিলেন পেশায় একজন চিকিৎসা। তাঁর আরও একটি পরিচয় হল, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন হলেন তাঁর দৌহিত্র।
ক্ষিতিমোহন ১৯০২ সালে কাশির কুইন্স কলেজ থেকে সাংস্কৃত সাহিত্যে এমএ পাস করেন এবং শাস্ত্রী উপাধি লাভ করেন। সোমবারাজ স্টেটের শিক্ষা সচিব হিসেবে ১৯০৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ১৯০৮ সালে তিনি রবীন্দ্রনাথের আহবানে সাড়া দিয়ে শান্তিনিকেতনে আসেন এবং ব্রহ্মচর্যাশ্রম এর অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। অধ্যাপনা ছাড়াও ক্ষিতিমোহন কিছুদিন বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ক্ষিতিমোহন ছিলেন এমন একজন শিক্ষাবিদ যিনি বহু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। সংস্কৃত বাংলা হিন্দি ইংরেজি গুজরাতি রাজস্থানী আরবি ও ফারসি ভাষায় তার গভীর জ্ঞান ছিল। মধ্যযুগের সাধু-সন্তদের এবং বাংলার বাউলদের সম্পর্কে তিনি ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করেন এবং সে বিষয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। বেদ, উপনিষদ, তন্ত্র ও স্মৃতিশাস্ত্রে ক্ষিতিমোহনের পাণ্ডিত্য ছিল বিস্ময়কর।
তার লেখা গ্রন্থ গুলির মধ্যে কবীর, ভারতীয় মধ্যযুগের সাধনার ধারা, ভারতের সংস্কৃতি, বাংলার সাধনা, যুগ গুরু রামমোহন, জাতিভেদ, বাংলার বাউল, হিন্দু সংস্কৃতির স্বরূপ, প্রাচীন ভারতে নারী, চিন্ময় বঙ্গ, রবীন্দ্র প্রসঙ্গ, হিন্দু ইজম, Medieval Mysticism of India, ভারতের হিন্দু মুসলমান যুক্ত সাধনা ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
উপরের উদ্ধৃতিটি, ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত ক্ষিতিমোহন সেনের লেখা, ‘ভারতের হিন্দু মুসলমান যুক্ত সাধনা’ নামক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই গ্রন্থের অন্তর্গত ‘স্থাপত্য শিল্প’ শিরোনামে লিখিত প্রবন্ধ শেষ করেছেন উল্লেখিত কথাগুলো দিয়ে। এই প্রবন্ধে তিনি দেখিয়েছেন মধ্যযুগে কীভাবে ভারতীয় স্থাপত্য শিল্প কিভাবে ভারতীয় এবং অভারতীয় এশীয় সংস্কৃতির এবং স্থাপত্য রীতির দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। মূলত এই গভীর সম্পর্কের বিষয়টি বোঝানোর জন্যই এবং হিন্দু-মুসলমান যুক্ত সাধনা ও তার ফলাফল সম্পর্কে অভিহিত করতেই তিনি এই মন্তব্যটি দিয়ে নিবন্ধটি শেষ করেছেন।
ক্ষিতিমোহন সেন বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র স্মৃতি স্বর্ণপাদক ১৯৪২ ও প্রথম বেশি করতাম ১৯৫২, অর্ধার হিন্দি ভাষা প্রচার সমিতি থেকে মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার ১৯৫৩, প্রয়াগের হিন্দি সাহিত্য সম্মেলন থেকে মুরারকা পুরস্কার ১৯৫৩ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদ ১৯৫৪ লাভ করেন।
১৯৬০ সালের ১২ ই মার্চ তিনি পরলোক গমন করেন।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন