হিন্দুদের সুরক্ষা সম্পর্কে বল্লভভাই প্যাটেল
হিন্দুদের সুরক্ষা সম্পর্কে বল্লভভাই প্যাটেলের উক্তি :
“বিষ ছড়িয়ে উত্তেজিত করে হিন্দুদের সুরক্ষিত ও সংগঠিত করার কোনও প্রয়োজন নেই। এই বিষক্রিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবেই দেশকে আজ গান্ধীজির মতো মহামূল্যবান জীবন হারানোর মূল্য চোকাতে হচ্ছে।”
—সরদার বল্লভভাই প্যাটেলউক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
আজকের আজকাল পত্রিকায়প্যাটেলের চিঠি সহ
বিষ ছড়িয়ে হিন্দুদের সংগঠিত করার দরকার নেই!বলেছিলেন প্যাটেল
গান্ধীজি এবং তঁার পরিচ্ছন্নতার ভাবনা, জওহরলাল নেহরু এবং তঁার ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আর তঁার দেশপ্রেম— ভারতীয় ইতিহাসের কোনও আইকনকে অঁাকড়ে ধরতে কসুর করেননি নরেন্দ্র মোদি। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং তঁার সর্বভারতীয় অখণ্ডতার চিন্তা। সেই সর্দার প্যাটেল, স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি গান্ধীহত্যার পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। প্যাটেল নিঃসন্দেহ ছিলেন, আরএসএস সরাসরি না হলেও হিন্দু মহাসভা নিশ্চিত জড়িত গান্ধীহত্যার ষড়যন্ত্রে। দেড় বছর পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও প্যাটেল শর্ত আরোপ করেছিলেন, আরএসএস কখনও রাজনীতিতে যোগ দিতে পারবে না। রাজি হয়েছিলেন আরএসএস নেতারা, নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছিল এবং এক বছরের মধ্যে শর্ত ভঙ্গ করেছিল আরএসএস। জনসঙ্ঘকে নিজেদের রাজনৈতিক শাখা হিসেবে গড়ে তুলেছিল, যা পরে বদলে যায় ভারতীয় জনতা পার্টিতে।
সেই বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি গড়ে ইতিহাস নতুন করে লিখতে চাইছেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি। তঁার দৃষ্টি নিবদ্ধ ২০১৯ লোকসভা ভোটে। কিন্তু ইতিহাস তঁার ধামাধরা নয়। ফলে বিশ্বের উচ্চতম মূর্তির ফলাও প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই উঠে আসছে অস্বস্তিকর সব তথ্য। যেমন আরএসএসের সরসঙ্ঘচালক ও তাত্ত্বিক মহাগুরু মাধব সদাশিব গোলওয়ালকারের চিঠির জবাবে সর্দার প্যাটেলের লেখা এই চিঠি
ভাই শ্রী গোলওয়ালকার,
আপনার ১১ আগস্ট তারিখের চিঠিটি পেয়েছি। আপনার ওই একই তারিখের চিঠি জওহরলালও আমাকে পাঠিয়েছে।
আরএসএস সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি আপনি খুব ভালভাবেই জানেন। গত ডিসেম্বরে জয়পুরে, আর জানুয়ারি মাসে লখনউয়ে আমি আমার মতামত জানিয়েছি। জনগণ সেই মতকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু আরএসএসের লোকজনের ওপর তা কোনও প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয় না, তারা তাদের কর্মসূচিও বদলায়নি। আরএসএস যে হিন্দু সমাজের জন্য কাজ করছে, তা নিয়ে সংশয় নেই। যে সব অঞ্চলে সহযোগিতা ও সংগঠনের প্রয়োজন, সেখানে আরএসএসের যুবকরা শিশু ও নারীদের রক্ষা করেছে ও তাদের স্বার্থে কাজ করেছে। সুবিবেচক কোনও ব্যক্তিই তা নিয়ে অভিযোগ তুলবেন না। কিন্তু বিষয়টি তখনই আপত্তিকর, যখন তারা প্রতিহিংসায় উন্মত্ত হয়ে মুসলিমদের ওপর হামলা করছে। হিন্দুদের সংগঠিত করা ও সাহায্য করা এক ব্যাপার, কিন্তু তাদের দুর্দশা দেখিয়ে অন্য নিরীহ ও অসহায় নর–নারী–শিশুদের ওপর প্রতিশোধ নিতে ছুটে যাওয়া সম্পূর্ণ আলাদা।
তা ছাড়া, কংগ্রেস সম্পর্কে তাদের বিরোধ, সেই বিরোধের উগ্র চেহারা, ব্যক্তি মানুষকে অগ্রাহ্য করা, সম্ভ্রমবোধ বা শালীনতার সমস্ত ধ্যানধারণার প্রতি তাদের অসম্মান জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করছে। তাদের সমস্ত ভাষণই সাম্প্রদায়িক বিষে ভরা। বিষ ছড়িয়ে উত্তেজিত করে হিন্দুদের সুরক্ষিত ও সংগঠিত করার কোনও প্রয়োজন নেই। এই বিষক্রিয়ার চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবেই দেশকে আজ গান্ধীজির মতো মহামূল্যবান জীবন হারানোর মূল্য চোকাতে হচ্ছে। আরএসএসের প্রতি সরকার ও জনসাধারণের আর একবিন্দু সহমর্মিতাও অবশিষ্ট নেই। বরং বিরোধিতা জাগ্রত হয়েছে। বিরোধ তীব্রতর হয়েছে যখন গান্ধীজির মৃত্যুর পর আরএসএসের লোকজন উল্লাস প্রকাশ করেছে ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে আরএসএসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা সরকারের অবশ্যকর্তব্য হয়ে ওঠে।
তখন থেকে ছ’মাসের বেশি পেরিয়ে গেছে। আমরা আশা করেছিলাম যে, এই সময়ের মধ্যে যথাযথ ও পূর্ণ বিবেচনার মাধ্যমে আরএসএস ঠিক পথে আসবে। কিন্তু আমার কাছে যে সব রিপোর্ট আসে, তা থেকে এটা পরিষ্কার যে, তাদের পুরনো কাজকর্ম নতুন করে উজ্জীবিত করার চেষ্টাই তারা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি আরও একবার আপনাকে আমার জয়পুর ও লখনউয়ের ভাষণ বিবেচনা করে দেখতে বলব ও সেখানে যে পথনির্দেশ আমি দিয়েছিলাম, তা গ্রহণ করতে বলব। আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে, তাতেই আরএসএস ও দেশের জন্য মঙ্গল নিহিত আছে। সেই পথে এগিয়েই আমরা দেশের অগ্রগতি অর্জনের জন্য হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারি। অবশ্য, আমরা যে খুব অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছি, তা আপনি জানেন। এই সময়ে দেশের সর্বোচ্চ বা সবচেয়ে নিচুতলায় থাকা যে কোনও ব্যক্তিরই দেশের কাজে, যেভাবে সম্ভব, কিছু ভূমিকা রাখা দরকার। এই স্পর্শকাতর সময়ে পুরনো শত্রুতা বা দলীয় দ্বন্দ্বকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত নয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কংগ্রেসে যোগ দিয়েই আরএসএসের লোকেরা তাঁদের দেশপ্রেমের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, আলাদা থেকে বা বিরোধিতা করে নয়। আমি আনন্দিত যে, আপনি মুক্তি পেয়েছেন। আশা করি আমি যা বললাম, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে ঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন। আপনার ওপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি সি পি গভর্নমেন্টের সঙ্গে বার্তা বিনিময়ের প্রক্রিয়ায় আছি। তাঁদের উত্তর পাওয়ার পর আপনাকে জানাব।
ইতি
বল্লভভাই প্যাটেল
১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন