সাহিত্য সম্পর্কে মহাশ্বেতা দেবীর উক্তি
সাহিত্য সম্পর্কে মহাশ্বেতা দেবীর উক্তি :
“সাহিত্য অনেকটাই ডকুমেন্টেশন অফ টাইম।”
—মহাশ্বেতা দেবীউক্তিটি ইংরেজিতে পড়ুন
উক্তিটির উৎস ও প্রসঙ্গ জানুন :
Mahasweta Devi's quotes about literature
Mahasweta-Devis-quotes-about-literature
প্রাপ্ত তথ্য নিশ্চিত করে যে মহাশ্বেতা দেবী তাঁর সাহিত্য দর্শন প্রসঙ্গে সরাসরি বলেছেন: “আমি সময়কে দলিলীকরণে বিশ্বাসী!”। এছাড়াও, তিনি তাঁর সাহিত্য সম্পর্কে লিখেছেন: “লেখায় আমি আপাত ঘটনাকে বিশ্লেষণ করায়, বিচার করায়, সময়কে দলিলীকরণে বিশ্বাস করি। কেননা একমাত্র সেভাবেই, আমার মতে, উত্তরন সম্ভব বৃহত্তর আরও মুক্ত ও স্বচ্ছন্দ কোনো আকাশে”। এই দুইটি মূল বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে উদ্ধৃতিটি সম্ভবত সমালোচক বা সাংবাদিক কর্তৃক তৈরি একটি সংক্ষিপ্ত দার্শনিক উপমা (capturing metaphor), যা মহাশ্বেতা দেবীর সুনির্দিষ্ট দার্শনিক নীতিটিকে জনপ্রিয় করেছে। এই নীতিটি তাঁর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংকলনের ভূমিকা অংশে (যেমন, শ্রেষ্ঠ গল্প সংকলনের 'ভূমিকার পরিবর্তে' শীর্ষক প্রবন্ধে ) অথবা কল্যাণ মৈত্রের সঙ্গে আলাপচারিতার মতো গভীর মননশীল সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত হয়ে থাকতে পারে।
তবে আমরা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে পারি দুটি লেখার কথা। যেমন, সাংবাদিক কনিষ্ক ভট্টাচার্য সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তাঁর লেখায় মহাশ্বেতা দেবীর এই উক্তিটি ব্যবহার করেছেন। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয় ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ‘এই সময়’ সংবাদপত্রের ‘রবিবারোয়ারি’ পাতায়। এছাড়া, মজিদ মাহমুদ তাঁর ‘মহাশ্বেতা দেবী : জীবন ও সাহিত্যের অভিন্ন উৎস’ নিবন্ধে মহাশ্বেতা দেবীর এই উক্তিটি উদ্ধৃত করেছেন। মজিদ মাহমুদের এই নিবন্ধটি প্রকাশিত হয় সম্পাদক: মাঈন উদ্দিন জাহেদের ‘পুবাকাশ’ (অনলাইন সংস্করণ)-এর ২৮ জুলাই ২০২০ সালে।
মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্য সংক্রান্ত এই বিশ্বাসটি তীব্রভাবে সামনে আসে ১৯৭০-এর দশকে। এই পর্বে তিনি নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লিখেছিলেন তাঁর যুগান্তকারী উপন্যাস ‘হাজার চুরাশির মা’ (১৯৭৪)। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর এই উপন্যাস কেবলমাত্র কল্পনাপ্রসূত আখ্যান ছিল না, বরং তা ছিল বিজয়গড়ের মতো শহরতলীতে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার উপর তৈরি ডকুমেন্টেশন বা দলিল। মহাশ্বেতা দেবীর কাছে সাহিত্যের দলিলীকরণ তাই কেবল অতীতের ঘটনার রেকর্ড রাখা নয়, বরং সেই সত্যকে স্থাপন করা, যার মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন করা সম্ভবপর হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন, একমাত্র সময়কে নির্ভুলভাবে দলিলীকরণের মাধ্যমেই ‘উত্তরন’ সম্ভব বৃহত্তর, আরও মুক্ত ও স্বচ্ছন্দ কোনো আকাশে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন